জীবন বদলে দেয় যেসব উপদেশ

ফকিহুল মিল্লাত মুফতি আব্দুর রহমান (রহ.):

আল্লাহ তাআলা আমাদের দুনিয়ায় প্রেরণ করেছেন খেয়েদেয়ে ফুর্তি করার জন্য নয়, বরং কষ্ট করে কিছু কামাই করার জন্য। মনে রাখবেন, দুনিয়া কামাই করার জায়গা। আর জান্নাত হলো ফুর্তি করার জায়গা। দুনিয়া কষ্টক্লেশের নাম।

আর আখিরাত সুখ-শান্তির নাম। মহানবী (সা.) ওই সত্তা, যাকে কেন্দ্র করে আল্লাহ তাআলা সৃষ্টিজগতের অস্তিত্ব দান করেন। তিনি খন্দক যুদ্ধে নিজে কোদাল হাতে পরিখা খননে ব্যস্ত অথচ জবান মোবারকে উচ্চারিত হচ্ছিল, ‘হে আল্লাহ! আপনি আনসার ও মুহাজির সাহাবাদের ক্ষমা করুন।’

আর পরিখা খননে তাদের কষ্টক্লেশ দেখে শুরুতেই সান্ত্বনার বাণী শোনালেন যে আমোদ-ফুর্তির জায়গা হলো আখিরাত, দুনিয়া নয়।

ফুর্তির জায়গা কোনটি আর আয়-রুজির জায়গা কোনটি তা নির্ণয় করতে পারলে ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক জীবন পরিচালনা করাও অতি সহজ হয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ।

দেখুন, একজন দুষ্ট ছাত্রও কিন্তু একসময় রাত জেগে লেখাপড়া করে। কারণ পরের দিন তার পরীক্ষা। সে এ ব্যাপারে অবগত যে এখন মেহনত করলে পরীক্ষায় পাস করবে।

পাস হলে চাকরি পাবে। বোঝা গেল, রাতের ঘুম হারাম করার পেছনে চাকরির চিন্তাই মূল কারণ। একজন দুষ্ট ছাত্রও যদি বুঝতে পারে রাত জেগে মেহনত করলে সে কী পাবে, তাহলে আমাদের কেন আখিরাতের বুঝ আসে না। লোকেরা যদি বুঝতে পারে, মেহনত করলে কিছু পাওয়া যাবে, আমাদের কেন এই বুঝ আসে না যে মেহনত করলে আখিরাত পাব। আমাদের আয়ুর পরিধি অনেক কম।

জীবন একবারই লাভ হয়, বারবার নয়। অতএব, যত পারা যায় আখিরাতের জন্য মেহনত করতে হবে। কারণ আমাদের সম্পর্ক রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে। মনে রাখবেন, রাসুল (সা.)-এর আগমন কোনো বিশেষ অঞ্চলের জন্য নয়, বরং পুরো দুনিয়ার জন্য। অজুহাত নয়, সচেতন হোন : আমাদের জজবা (ধর্মীয় আবেগ) ও মেহনত অনুপাতেই আল্লাহ তাআলা আমাদের সাহায্য করবেন। দুনিয়ায় আমাদের আগমন নেক কাজ করার জন্য। সুতরাং নেক কাজ করাই স্বভাবে পরিণত করতে হবে। এই শ্রমবাজারে বিভিন্ন অজুহাতে শ্রম থেকে বিরত থাকলে পারিশ্রমিক পকেটে আসবে না। দেখুন, একজন শ্রমিক কিন্তু জ্বর, সর্দি ও কাশির অজুহাত দিয়ে কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত থাকেন না। কারণ তাঁর জানা আছে, শ্রম দিলেই কিছু আসবে, নয়তো রিক্তহস্তে কালাতিপাত করতে হবে। ফলে তিনি কাজের ব্যাপারে সচেতন থাকেন। খোঁড়া কোনো অজুহাত খোঁজেন না, অবহেলাও করেন না। মনে রাখবেন, অজুহাত দুনিয়ার বেলায় চলতে পারে, আখিরাতের বেলায় নয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যা করেছ, তা-ই পাবে। গন্তব্যে গেলে তা-ই উশুল হবে।’ (সুরা আন নাজম, আয়াত : ৩৯)

পাপমুক্ত থাকা সহজ : আমরা মনে করি, গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা অনেক কঠিন। অথচ এটা অনেক সহজ। আল্লাহ তাআলা বান্দাকে কোনো কঠিন বিধান দান করেননি, যা তার সামর্থ্যের মধ্যে, তা-ই দান করেন। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ সামর্থ্যের বাইরে কাউকে বাধ্য করেন না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৮৬)

যখন অন্তরে আল্লাহর ভয় জমে যাবে তখনই গুনাহ থেকে বাঁচার পথ সুগম হবে। বান্দা হিসেবে চেষ্টা আপনাকেই করতে হবে। তবেই আল্লাহ বাঁচাবেন। চেষ্টা করে দেখুন, আল্লাহ এমনভাবে বাঁচাবেন, যা কল্পনাও করতে পারবেন না। গুনাহ থেকে বাঁচার সত্যিকারের ইচ্ছা থাকলে আল্লাহ উপকরণ তৈরি করে দেবেন। আল্লাহ বান্দাকে মাহরুম করতে পারেন না। তিনি তো অতিশয় দয়ালু। মেহনতের পথ ও পন্থা ভুল হলে ভিন্ন কথা।

আয় অনুপাতে ব্যয় : অনেকে বলে, ‘চাকরি করি, পরিবার চলে না।’ কিন্তু কেন? আয় অনুপাতে ব্যয় করুন। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করুন। মনে রাখবেন, দুনিয়া কামানোর জায়গা, খাওয়ার জায়গা নয়। হারাম ছেড়ে হালাল অবলম্বন করুন। হারাম পোলাও-বিরিয়ানি ছেড়ে হালাল জাউ খান। হারাম কোরমা ছেড়ে হালাল ডাল খান। দেখবেন, খুব চলবে। আবার শান্তিও পাবেন। এটাও না পারলে রোজা রাখুন। তবু দৃঢ়প্রতিজ্ঞা করুন, হারাম খাব না, গুনাহ আমাকে ছাড়তেই হবে। শুরুতে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতেও পারেন। কিন্তু অতিশিগগির কেটে যাবে। এমনভাবে রিজিকের দুয়ার খুলে যাবে, যা কল্পনাতীত। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘যে আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার জন্য সব কিছু সহজ করে দেন।’ (সুরা তালাক, আয়াত : ৩)

টুকটাক সমস্যা আসতে পারে, তবে পেরেশান হতে নেই। বরং আফিয়াতের দোয়া করুন। ইনশাআল্লাহ সব ঠিক হয়ে যাবে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই কষ্টের সঙ্গে স্বস্তি আছে। নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই কষ্টের সঙ্গে স্বস্তি আছে।’ (সুরা ইনশিরাহ, আয়াত : ৫-৬)

রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘দুনিয়ায় সর্বাধিক পরীক্ষার সম্মুখীন হলেন নবীরা, এরপর যারা তাঁদের যত বেশি অনুসরণকারী।’ (মুসনাদে বাজ্জার, হাদিস : ১১৫০)

দুনিয়া সমস্যার জায়গা : গুনাহ থেকে বাঁচতে চাইলে কিছু ঝড়ঝাপটা ও সমস্যা আসতে পারে। তবু হিম্মত হারানো যাবে না। কারণ সমস্যাপূর্ণ জায়গার নামই হলো দুনিয়া। শেষ কথা হলো, অন্তর ও স্বভাব অপবিত্র হলে গুনাহর সুযোগ ও স্থান তালাশ করে। আর পবিত্র হলে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করে।

অতএব, আসুন দৃঢ়প্রতিজ্ঞা করি, যতই ক্ষতি বা কষ্ট হোক না কেন, অবশ্যই গুনাহ থেকে বিরত থাকব। আল্লাহ তাআলা আমাদের এবং আপনাদের সব ধরনের গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সূত্র : আল আবরার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *