দফায় দফায় সংঘর্ষে উত্তাল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি অর্ধ-শতধিক

স্থানীয়দের সঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় উত্তাল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যলয়। দফায় দফায় গভীর রাত পর্যন্ত এই সংঘর্ষ অব্যাহত ছিলো। রাতে সাড়ে ১০ টা পর্যন্ত শুধু রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালেই আহত হয়ে ৪০ এর অধিক ভর্তি হয়। যার অধিকাংশই শিক্ষার্থী বলে নিশ্চিত করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এছাড়া আহত আরও অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালসহ নগরীর বিভিন্ন হাসপাতাল ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন। নিউজ লিখা পর্যন্ত সংঘর্ঘ অব্যাহত ছিলো।

এদিকে, ঘংঘর্ষের এক পর্যায়ে বিনোদপুর এলাকার দোকানপাটে অগ্নি সংযোগ করে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে পুলিশ ফাঁড়িতেও। পরিস্থিতি সমলাতে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে অভিযানে নামে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী।

শনিবার (১১ মার্চ) সন্ধ্যায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেটে এই সংর্ঘষ শুরু হয়। রাত সাড়ে ১০ টা পর্যন্ত পুড়ে ছায় হয়েছে অনেক দোকানপাট। পুলিশের পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরাও কাজ করছিলেন। এই সংঘর্ষে অন্তত অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীসহ শতাধিক আহতের খবর পাওয়া গেছে।

রাত ১০ টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ জানান, এখন পর্যন্ত ৪০ জন ভর্তি হয়েছে। এরমধ্যে কয়েকজন গুরুতর। তবে ঘটনার পরপরই হাসপাতালে ডাক্তারসহ অন্যান্য ব্যবস্থাপনা বাড়ানো হয়েছে।
এদিকে, পরিস্থিতি সামলাতে ঘটনার পরপরই রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ঘটনাস্থলে গেছেন। দুই পক্ষকেই শান্ত করার চেষ্টা করেন বলে জানিয়েছেন রাসিকের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোস্তাফিজ মিশু। তবে তিনি যাওয়ার পরও বিরতি দিয়ে দিয়ে ফুঁসে উঠা শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মাঝে সংঘর্ঘ অব্যাহত ছিলো।

জানা গেছে, বগুড়া থেকে মোহাম্মদ বাসে রাজশাহী আসছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী আলামিন আকাশ। বাসে সিটে বসাকে কেন্দ্র করে গাড়ির ড্রাইভার শরিফুল ও সুপারভাইজার রিপনের সাথে কথাকাটাকাটি হয় আকাশের। এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেট এসে আবারো সুপারভাইজারের সাথে ঝামেলা বাধে। তখন স্থানীয় এক দোকানদার এসে শিক্ষার্থীদের সাথে তর্কে জড়ান। একপর্যায়ে উভয়র মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে জড় হন এবং স্থানীয় দোকানদারে উপর চড়াও হন।

একপর্যায়ে স্থানীয়রা একজোট হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায়। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও পাল্টা ধাওয়া করেন। এসময় দায়িত্ব পালনকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ২ জন সাংবাদিকসহ অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী আহত হন। পরে এই সংখ্যা বাড়তে থাকে।
পরিস্থিতি নিয়য়ন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কাজ করছে জানিয়ে প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক জানিয়েছিলেন, তারা মাঠে আছেন। শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে রুমে পাঠানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীরও কাজ করছে।

এ বিষয়ে মহানগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার রফিকুল ইসলাম জানান, ঘটনাটি জানার পরপরই সংশ্লিষ্ট থানা ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তারা কাজ করছে। আশা করছি খুব দ্রুতই স্বাভাবিক হবে।এদিকে, এক বিজ্ঞপ্তিতে আগামী ১২ মার্চ রোববার ও ১৩ মার্চ সোমবার অনিবার্য কারণবশত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার পান্ডে স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আগামী ১৪ মার্চ (মঙ্গলবার) থেকে ক্লাস ও পরীক্ষাসমূহ যথারীতি চলবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *