বজ্রপাত মৃত্যু এড়াতে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে

টানা তাপদহের পর রাজশাহীর মাটিতে আকাশ থেকে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু বৃষ্টি নামার আগে ও পরে আকাশে ঘন মেঘের সাথে বজ্রপাত হয়েছে। তবে বজ্রপাত হলেও কোনো হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। অথচ দেশে বজ্রপাতে গত রোববার মারা গেছে নয়জন ও আহত হয়েছে তিনজন। বজ্রপাতে হতাহতের প্রায় সবাই হাওরাঞ্চলের বাসিন্দা। হাওর এলাকায় বোরো ধান কাটা ও মাড়াই করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত খেতে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে মানুষ মারা যাচ্ছে। মাঠে গরু চরাতে গিয়েও অনেকে বজ্রপাতের শিকার হন। রাজশাহী অঞ্চলেও বোরো ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হয়েছে। খোলা মাঠে ঘরে ধান তোলার জন্য শ্রমিকরা কাজ করছেন। আবার অনেকে বজ্রপাতের সময় রাস্তায় বের হোন। তাই বজ্রপাতে মৃত্যু এড়াতে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।
বজ্রপাতে প্রতিবছরই বিশেষ করে ঝড়-বৃষ্টির মৌসুমে মানুষ হতাহতের ঘটনা ঘটে। বন্যা বা সাইক্লোনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের তুলনায় দেশে এখন বজ্রপাতেই বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে। সরকার ২০১৬ সালে বজ্রপাতকে দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করেছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের এক হিসাব অনুযায়ী, বজ্রপাতে কত মানুষ মারা যায় তারা পরিসংখ্যান বিভিন্ন সময় জানা যায়। তবে বজ্রপাতে কত মানুষ আহত হয়, গবাদিপশু মারা যায় কতগুলো, কত গাছ ধ্বংস হয় সেই হিসাব নির্দিষ্ট করে জানা যায় না।
বজ্রপাত প্রতিরোধে সরকার কিছু কিছু কাজ করছে। এক কোটি তালগাছ রোপণের কথা রয়েছে। কাজটি করছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়। অবশ্য এ কাজ অনেক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তালগাছ লাগানোর স্থান নির্বাচন যথাযথ হয়েছে কিনা সেই প্রশ্ন উঠেছে। বজ্রপাতে সাধারণত মাঠে বা জলাশয়ের পাশে অবস্থানরত মানুষ মারা যায়। অথচ তালগাছ লাগানো হচ্ছে সড়কের পাশে। এসব তালগাছ ব্রজপাত রোধের উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারবে কিনা সেটা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। তালগাছ লাগাতে হবে বজ্রপাতপ্রবণ স্থানে। একেকটি তালগাছের বজ্রপাতরোধী ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে কমবেশি ১০ বছর সময় লাগবে। এজন্য লাইটনিং অ্যারেস্টার বসানো বেশি জরুরি। দেশের কয়েকটি স্থানে লাইটনিং ডিটেকশন সেন্সর বসানো হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে এ ধরনের আরো যন্ত্র স্থাপন করতে হবে। বজ্রপাতপ্রবণ এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে যথেষ্টসংখ্যক লাইটনিং অ্যারেস্টার যন্ত্র বসানোর উদ্যোগ নিতে হবে।
কৃষিজমি, খোলা মাঠ, খেলার মাঠ বা উন্মুক্ত প্রান্তরে বজ্রপাতের ঘটনা বেশি ঘটে। বৃষ্টিপাতের সময় এসব স্থানে আশ্রয় নেয়া সম্ভব হয় না। দেখা গেছে, বজ্রপাতে যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের সিংহভাগই খোলা মাঠ ও হাওরের মধ্যে কৃষিকাজ করছিলেন। অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে বজ্রপাতপ্রতিরোধী আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করার কথা আমরা এর আগেও বলেছি। আশার কথা, সরকার বজ্রপাত আশ্রয় কেন্দ্র করার পরিকল্পনা করেছে। বজ্রপাতপ্রবণ এলাকাগুলোতে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করার কথা রয়েছে। আমরা আশা করব প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়ন হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *