বাগমারা প্রতিনিধি:
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার নরদাশ ইউনিয়নের হাতিয়ার বিলে মাছ চাষ কে কেন্দ্র করে মাছচাষীদের সঙ্গে জমি মালিকদের ব্যাপক সংঘর্ষ সৃষ্টি হয়। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১৫/২০জন আহতের খবর পাওয়া গেছে। বুধবার (১ফেব্রুয়ারী) সকালে হাতিয়ার বিলে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এঘটনায় জমি মালিকদের পক্ষে মজিবর রহমান বাদি হয়ে হামলাকারী মাছচাষকারীদের ২৫জনের বিরুদ্ধে বাগমারা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
জানা যায়, গত ৩১জানুয়ারী মঙ্গলবার হাতিয়ার বিলের জমি মালিক মজিবর রহমান, জোনাব আলী, বাবু, সাকিম উদ্দিন, আজাদ, দুলালসহ জমি মালিকরা সিদ্ধান্তক্রমে নতুন করে মাছ চাষের জন্য নতুন পানিতে মাছের পোনা ছাড়েন। কিন্ত বুধবার (১ফেব্রুয়ারী) সকাল সাড়ে আটটার দিকে চৌদ্দ বছর ধরে জমি মালিকদের ঠকিয়ে যারা ওই বিলে মাছচাষ করছিলেন তাদের মধ্যে সুদের ব্যবসায়ী জোনাব আলী, মাছচাষ প্রকল্পের সাধারন সম্পাদক আব্দুল মতিন, জাফর আলী, সেকেন্দার আলী, আব্দুল মান্নান, আবেদ আলী, ভুট্টু, আফজাল, তমে, রেজাউল ইসলাম, রহিদুল ইসলামসহ প্রায় ৫০/৬০জন লাঠিসোটা ও দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে জমি মালিকদের ছেড়ে দেয়া মাছের পোনার ভেতর তারাও মাছের পোনা ছাড়তে আসে। এসময় জমি মালিকরা বাধা দিতে এলে তাদের ওপর হামলা চালায় তারা। এসময় উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১৫জন আহত হয়। আহত জমি মালিকদের পক্ষের সৈয়দ আলীর ছেলে জোনাব আলী ও মোহাম্মাদ আলীর ছেলে বাবু গুরুতর আহত হয়। আশংকাজনক অবস্থায় তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এছাড়াও সাকিম উদ্দিন, আজাদ ও দুলাল কে বাগমারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয় এবং অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। এছাড়াও হামলাকারীদের পক্ষে জোনাব আলী ও আবেদ আলীকেও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনার পর থেকে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এদিকে খবর পেয়ে হাটগাঙ্গোপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ ও বাগমারা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে নিয়েছে।
জানা যায়, উপজেলার নরদাশ ইউনিয়নের হাতিয়ার বিলের চারপাশে হাট মাধনগর, বাঁইগাছা, সুজনপালশা, চন্ডিপুরসহ পাঁচটি গ্রাম। হাতিয়ার বিল মৎস্য চাষ প্রকল্প নাম দিয়ে প্রভাবশালীরা জমি মালিকদের ঠকিয়ে চৌদ্দ বছর ধরে সেখানে মাছ চাষ করে আসছে। ওই প্রকল্পের সভাপতি তমেজ উদ্দিন এবং সাধারন সম্পাদক আব্দুল মতিন বিল দখলের জন্য একটি লাঠিয়াল বাহিনী গঠন করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিলে জমি মালিকরা মাছ চাষ করতে না পারলেও যাদের জমি নাই এমন অনেক প্রভাবশালীও রয়েছে দখল কমিটিতে। সুজনপালশা গ্রামের মৃত মেজতুল্ল্যার ছেলে তমেজ উদ্দিন, মৃত শরিয়তুল্যার ছেলে আব্দুল মতিন, নরদাশ গ্রামের রফাতুল্ল্যার ছেলে সেকেন্দার আলী, রহিম বক্সের ছেলে রফিক উদ্দিনসহ কতিপয় প্রভাবশালী ওই বিলে জোর পূর্বক মাছচাষ করে আসছে। বিভিন্ন সময়ে কৃষকরা বাধা দিলেও ওই এলাকার প্রভাবশালী ও তাদের পেটুয়াবাহিনী নরদাশ গ্রামের জোনাব আলী, আব্দুল মান্নান, ঝাফর আলী ও সুজনপালশা গ্রামের আফজাল হোসেনসহ বেশ কিছু লাঠিয়ালবাহিনী সন্ত্রাসী কায়দায় হাসুয়া, লাঠি, চাকু, দা নিয়ে এলাকার জোরদারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন অব্যাহত রেখেছে। এর আগে মৎসচাষ প্রকল্পের সদস্যদের হাতে আক্রমনের শিকার হয়েছেন নরদাশ গ্রামের মোবারক হোসেন, রফিকসহ অনেকেই। তাদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে তারা হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছে। প্রাণ ভয়ে তারা বিভিন্ন সময়ে পালিয়ে পালিয়ে থাকছে বলেও জানায় ভূক্তভোগীরা। সাবেক ইউপি সদস্য চন্ডিপুর গ্রামের সেকেন্দার আলী, সাবেক ইউপি সদস্য নরদাশ গ্রামের মুনছুর রহমানসহ কৃষক মজিবর রহমান, মোবারক হোসেন, হাটমাধনগরের দেলোয়ার হোসেন, আলামিন, সুজনপালসা গ্রামের আব্দুর রহিমসহ অন্তত চার শতাধিক কৃষক দখলকারীদের হাত থেকে বিলটি উদ্ধারের দাবী জানিয়েছে আসছিলেন।
নরদাশ ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ গোলাম সারওয়ার আবুল জানান, এর আগে জমি মালিকদের পক্ষে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর আমি নিস্পত্তির চেষ্টা করেছি। একটি পক্ষ না আসায় আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রতিবেদন জমা দিয়েছি।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বাগমারা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আমিনুল ইসলাম জানান, বিল নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পর থেকেই এলাকায় পুলিশী টহল জোরদার করা হয়েছে। ওই ঘটনায় এক পক্ষ থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।