রামেক হাসপাতালে ঠাঁই নেই শিশুওয়ার্ডে II ৬৫ টাকার স্যালাইন ১২০০ টাকা

নিউজ ডেস্কঃ

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন বাড়ছে শিশু ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা। সবচেয়ে বেশি ভর্তি হচ্ছে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে। রামেক হাসপাতালে গত সাড়ে তিনমাসে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে ২১০৮ শিশু। তবে নিউমোনিয়ার স্যালাইনও বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। দাম বেড়েছে প্রায় ২০ গুণ।

রাজশাহীতে নিউমোনিয়ার স্যালাইনেরও সঙ্কট হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ওষুধ ব্যবসায়ীরা বলছেন, এপিএন স্যালাইনের পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে। আবার চাহিদামতো স্যালাইন পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। তারা বলছেন, ৬৫ টাকার স্যালাইন আমাদের কিনতে হচ্ছে এক হাজার থেকে ১২০০ টাকায়। যদিও এই স্যালাইনে বিক্রিতে খুবই স্বল্প লাভ।

এদিকে চাপ বেড়ে যাওয়ায় শিশুদের চারটি ওয়ার্ডের বারান্দাতেও ঠাঁই হচ্ছে না রোগির। অতিরিক্ত রোগির চাপে চিকিৎসাসেবা দিতেও হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক-নার্সরা। আবার রোগির স্বজনরা পড়ছেন নানা বিড়ম্বনায়।

রামেক হাসপাতালের ৯, ১০ ও ২৪ নম্বর শিশুওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুদের প্রচুর ভিড়। ভর্তি শিশুদের অভিভাবকদের কারণে হাসপাতালের ওয়ার্ডের ভেতরে পা ফেলা কঠিন হয়ে পড়েছে। একই অবস্থা ওয়ার্ডের বারান্দাতেও। বিশেষ করে ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে রোগি ও স্বজনদের ভিড় ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করাও কঠিন হয়ে পড়ছে।

এ ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিতে আসা বাগমারা উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামের এরশাদ আলী নামের এক শিশুর বাবা বলেন, আমার বাচ্চার বয়স ৯ মাস। প্রথমে বাগমারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখান থেকে রামেক হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। প্রথমে অবস্থা খারাপ থাকলেও বাচ্চা এখন সুস্থ আছে। নিউমোনিয়ার আক্রান্ত বাচ্চাকে বেড না পাওয়ায় মেঝেয় রাখতে হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বাচ্চার জন্য ডাক্তাররা স্যালাইন লিখে দিয়েছিলেন। সে স্যালাইন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এক দোকানে পেয়েছি তাও ১২০০ টাকা নিয়েছে। কিন্তু এই স্যালাইনের দাম কম বলে জানিয়েছেন নার্সরা।

আরেক রোগির অভিভাবক বলেন, চিকিৎসকেরা প্রতিদিন এপিএন, বেবি সল্টসহ বিভিন্ন স্যালাইন লিখছেন। হাসপাতালে থেকে স্যালাইনগুলোর সাপ্লাই নেই। বাইরে থেকে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। দোকানদাররা বলছেন স্যালাইন নাই। বেশি দাম দিতে চাইলে তারাা দিচ্ছেন।

বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির রাজশাহী শাখার সহসভাপতি রফিকুল ইসলাম শামীম বলেন, নিউমোনিয়া আক্রান্তের পরিমাণ বাড়ায় স্যালাইনের চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু কোম্পানিগুলো সরবরাহ বাড়াচ্ছে না। এ কারণে সঙ্কট তৈরি হয়ে দাম বেড়েছে। কিন্তু ৬৫ টাকার স্যালাইন ১ হাজার ২০০ টাকা বিক্রি হওয়া কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।

বিভাগীয় প্রধান ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের অধ্যাপক ডা. শাহিদা ইয়াসমিন বলেন, গত কয়েক দিন ধরে প্রতিদিন গড়ে ১০০ থেকে ১৩০ জন করে শিশু ভর্তি হচ্ছে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে। সর্বশেষ গত বুধবার ভর্তি হয়েছে ৮৪ জন। আর গত অক্টোবর মাসে ভর্তি হয়েছে ১ হাজার ৮৭৫ শিশু। শিশু বিভাগের চারটি ওয়ার্ডের মধ্যে এ সময়ে ২৪ নম্বর ওয়ার্ডেই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৫ শিশু মারা গেছে। আর গত আগস্ট থেকে চলতি নভেম্বর পর্যন্ত মোট নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে রোগী ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ১০৯ জন।

তবে স্যালাইন সংকট নেই দাবি করে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহাম্মদ বলেন, শিশু রোগির চাপ আছে ঠিক। তবে চিকিৎসা কার্যক্রম ঠিকঠাক মতো চলছে। চিকিৎসায় কোনো সমস্যা হচ্ছে বলে আমার জানা নেই।

সূত্রঃ দৈনিক সোনার দেশ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *