নিউজ ডেস্কঃ
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রশ্নে জাতীয় পার্টি এখনো দৃশ্যত সবাইকে ধোঁয়াশায় রেখেছে। তবে ভোটে যাওয়ার সব ধরনের প্রস্তুতিও নিচ্ছে দলটি।
দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ এবং তাঁর অনুসারীরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে থেকে ভোটে যেতে চান বলে আভাস মিলেছে। নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রশ্নে রওশনপন্থীদের মধ্যে এখনো কোনো মতভেদ দেখা যায়নি।
দলের মধ্যে তাঁদের সরকারের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিতি রয়েছে। অন্যদিকে দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের এবং তাঁর অনুসারীরা নির্বাচনে যেতে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।
এমন দোদুল্যমান অবস্থার মধ্যে গতকাল শনিবার জাতীয় পার্টির দুই পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনে দুটি চিঠি গেছে। একই দল থেকে দুটি চিঠি দেওয়ায় জাপার মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের বিষয়টি আবার প্রকাশ পেল।
তবে গত রাতে গণমাধ্যমকে রওশন এরশাদ বলেন, তিনি কোনো চিঠি দেননি।
দলটির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রশ্নে জাতীয় পার্টি দু-এক দিনের মধ্যে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করবে। ভোটের সব প্রস্তুতি নেওয়ার পরও মনোনয়নপত্র দাখিল থেকে প্রত্যাহারের দিন পর্যন্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখবেন দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, জাতীয় পার্টি ও তাঁর বিষয়ে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি, দলের বেশির ভাগ নেতার নির্বাচনের বিপক্ষে অবস্থান, সংসদ সদস্যদের নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে আগ্রহ এবং নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের অবস্থান শেষ পর্যন্ত কী দাঁড়ায়—এই কয়েকটি বিষয়ে জি এম কাদেরকে বেশ জটিল হিসাব মেলাতে হচ্ছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জাপা চেয়ারম্যান কোন আসন থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, ভোটে অংশ নেওয়ার পর তিনি কোনো প্রতিবন্ধকতায় পড়বেন কি না, বিষয়টি নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে বেশ আলোচনা আছে। এ ছাড়া দলে জি এম কাদেরের কর্তৃত্বের বিষয়ে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি যাতে ইতিবাচক হয়, সেই নিশ্চয়তাও চান তাঁর অনুসারীরা।
জাতীয় পার্টি মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু গত রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নির্বাচনে যাব কি না, তা দু-তিন দিনের মধ্যে জানাব।’ নির্বাচনে গেলেও এককভাবে অংশ নেবেন বলে তিনি জানিয়েছেন। জোটবদ্ধ হয়ে তাঁরা নির্বাচনে অংশ নেবেন না।
মুজিবুল হক বলেন, আলোচনার মাধ্যমে সব দল মিলে নির্বাচন করার যে আশা করেছিলেন, তা দেখা যাচ্ছে না। ফলে নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে তাঁরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।
চিঠিতে দুই পক্ষ যা বলেছে
নির্বাচন কমিশনে দেওয়া চিঠিতে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু স্বাক্ষরিত চিঠিতে লেখা হয়, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি হিসেবে প্রার্থী মনোনয়ন এবং প্রতীক বরাদ্দ করবেন চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদের। চিঠিতে তাঁর নমুনা স্বাক্ষরও পাঠানো হয়।
অন্যদিকে রওশনের চিঠিতে বলা হয়, এই নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থীরা দলীয় প্রতীক লাঙল কিংবা প্রার্থীর ইচ্ছানুসারে মহাজোটে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করতে পারবেন। তবে এটা শুধু ‘নির্বাচনী জোট’ হবে জানিয়ে বলা হয়, নির্বাচনের পর জাতীয় পার্টির নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা দলীয় সিদ্ধান্ত অনুসরণ করবেন।
চিঠিটি নিয়ে আসা কাজী মামুনুর রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনের বিষয়ে প্রধান পৃষ্ঠপোষকের চিঠি আমি পৌঁছে দিয়েছি। কেউ চাইলে জোটের প্রতীকও ব্যবহার করতে পারবেন। দলের মনোনয়ন কে দেবে না দেবে, সেটা বিষয় নয়।’
জাতীয় পার্টির দুটি চিঠির বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ সাংবাদিকদের বলেন, দুটি চিঠি নির্বাচন কমিশনের বৈঠকে তোলা হবে। কমিশন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে।