নিউজ ডেস্কঃ
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় সরকারি সড়কের পাশে লাগানো অর্ধশত তালগাছ মারতে অভিনব কায়দায় কীটনাশক প্রয়োগের ঘটনায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা শাহরিয়ার আলমকে চার লাখ টাকা (খরচা হিসেবে) জরিমানা করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে করখন্ড দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক হিসেবে থাকা এ নেতাকে সেই মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ মে) বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
৬০ দিনের মধ্যে এ টাকা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কাছে জমা দেবেন। কৃষি কর্মকর্তা এ অর্থ দিয়ে যে সব তালগাছ জীবিত আছে সেগুলো পরিচর্যা করবেন। আর নতুন করে গাছ লাগাবেন। আর ৩০ দিনের মধ্যে শাহরিয়ার আলমকে করখন্ড দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক পদ থেকে বহিষ্কার করতে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আদালতের এ রায় ও আদেশ রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগ বরাবরে পাঠাতে বলা হয়েছে। তারা এ বিষয়ে তাদের দলীয় সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
আদালতে শাহরিয়ার আলমের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. জাহিদুল হক জাহিদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ওয়ায়েস আল হারুনী। দৈনিক প্রথম আলোর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী প্রশান্ত কুমার কর্মকার।
আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ওয়ায়েস আল হারুনী।
গত ৩১ জানুয়ারি দৈনিক প্রথম আলোয় ‘৫০ তালগাছে কীটনাশক: দোষীর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ কেন নয়’ শিরোনামে একটি সম্পাদকীয় ছাপা হয়।
সম্পাদকীয়কে বলা হয়, প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, প্রায় এক দশক আগে স্থানীয় এক বৃদ্ধসহ কয়েকজন ব্যক্তি সড়কের উভয় পাশে প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তালবীজ লাগিয়েছিলেন। সেসব তালগাছ বড় হয়ে এখন ছায়া দিচ্ছে। একটি তালবীজ গাছ হয়ে উঠতেই সময় লাগে এক দশক বা যুগের বেশি।
ফলে বোঝা যায়, কী নিষ্ঠা ও ধৈর্য নিয়ে পরিচর্যা করে তালগাছগুলো বড় করে তুলেছেন বাইগাছার সেসব উদ্যোগী মানুষ। আর আমরা অবাক হলাম, সেই গাছগুলো মারতে বাকল তুলে সেখানে কীটনাশক প্রয়োগ করেছেন শাহরিয়ার আলম নামে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা। প্রকৃতি ও গাছের প্রতি কী রকম নির্দয় হলে এমন কাজ করা যায়, সেটিই প্রকাশ পায় এ ঘটনায়।
শুভডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি শাহরিয়ার আলম তালগাছ মেরে ফেলার ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি সংবাদটি প্রকাশ না করার জন্য প্রথম আলোর প্রতিবেদককে অনুরোধও করেন। তালগাছের ছায়ার কারণে শাহরিয়ারের লাগানো আমগাছ ঠিকমতো বেড়ে উঠছিল না। ফলে এমন কান্ড করেছেন তিনি।
এমন অমানবিক কাজের জন্য শাহরিয়ার আলমকে আইনের আওতায় আনা হোক। এছাড়া বন বিভাগের স্থানীয় দায়িত্বশীলদের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে মরতে বসা তালগাছগুলোকে সারিয়ে তোলার দ্রুত পদক্ষেপ নিন।
এ বিষয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সম্পাদকীয় নজরে নিয়ে গত ১ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ শাহরিয়ার আলমকে হাইকোর্টে হাজির হতে নির্দেশ দেন।
ওই আদেশ অনুসারে বাগমারা উপজেলার শুভডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি শাহরিয়ার আলম গত ১২ ফেব্রুয়ারি আদালতে হাজির হন।
এরপর দুপুর পৌনে ১২টা থেকে (মধ্যাহ্ন বিরতি ছাড়া) বিকেল ৪টা পর্যন্ত আদালতের অভিপ্রায় অনুযায়ী তিনি দাঁড়িয়েছিলেন।
এরপর ২৩ ফেব্রুয়ারি পুলিশ একটি প্রতিবেদন দেয়।
স্থানীয় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলামের দেওয়া প্রতিবেদনের একাংশে বলা হয়, প্রাথমিক তদন্তে জানা যায় যে, মো. শাহরিয়ার নিজের রোপণ করা আমগাছের বেড়ে ওঠার প্রতিবন্ধকতা দূর করতেই তালগাছগুলোতে ক্ষত সৃষ্টি করে বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে মারার অপচেষ্টা করেছেন। তালগাছ রক্ষার্থে তার কোনো উদ্যোগ ও আন্তরিকতা পরিলক্ষিত ছিল না। তালগাছগুলোর ক্ষতি করার পেছনে তার ব্যক্তিগত স্বার্থ রয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে শাহরিয়ারের সঙ্গে আরও কেউ জড়িত থাকতে পারে বলে মর্মে প্রতীয়মান হয়েছে।
তথ্যসূত্র: বাংলানিউজ