ব্যাপক পদক্ষেপ নেয়ার পরও এবারের ইদের ছুটিতেও সড়কে দেশে বহু প্রাণ গেছে। সেইসাথে আহত হয়েছে অনেকে। জানা যায়, ইদের ছুটিতে তিন দিনে সারা দেশের সড়কে ৬৭ জন নিহত এবং শতাধিক আহত হয়েছেন।
সম্প্রতি দেশে সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটলেও কেন দুর্ঘটনার মাত্রা কমছে না, তা খতিয়ে দেখা দরকার। সড়ক দুর্ঘটনার কারণগুলো বহুল আলোচিত। শুধুমাত্র গত মার্চ মাসেই সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে দেশে ৫৬৪ জনের। আহতের সংখ্যা ১০৯৭ জন। সঙ্গত কারণেই সুনির্দিষ্ট করে বলতে হচ্ছে, যানজট ও সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনা এখন একটি অপরিহার্য বিষয়।
এসব ঘটনা রোধে কর্তৃপক্ষকে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়টি বর্তমানে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। কাজেই দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সরকারিভাবে আরও জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত ফল পেতে হলে সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের সমন্বিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা দরকার। সড়ক পরিবহণ আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন ছাড়া দুর্ঘটনা কাক্সিক্ষত মাত্রায় কমবে বলে মনে হয় না। কাজেই এ আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। দেশে মোটরসাইকেলের সংখ্যা বাড়ছে। অদক্ষ মোটরসাইকেল চালকদের কারণে সড়কে ঝুঁকি বাড়ছে। লক্ষ করা যায়, হেলমেটসহ নিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যবহার না করেই অনেকে মোটরসাইকেল চালান। মোটরসাইকেল চালকদের আইন মেনে চলতে বাধ্য করতে প্রয়োজনে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে। সড়কে যাতে ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন চলাচল করতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে সড়কের ত্রুটি দূর করার জন্যও নিতে হবে পদক্ষেপ। লাইসেন্স প্রদানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমবে।
যারা সড়কে যানবাহন চালান তাদের মধ্যে অনেকেই নিয়ম-কানুনের ধার ধারেন না। শুধু সুযোগ খোঁজেন আগে যাওয়ার। এতে দুর্ঘটনা অবধারিত হয়। যদিও এটা নিয়ন্ত্রণের দায় পুলিশের, তারা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টাও করেন কিন্তু পেরে ওঠেন না। পুলিশের লোকজন এখন নানা জবাবদিহিতার এক সীমাবদ্ধ অবস্থানে পৌঁছে গেছেন। তারা চাইলেও রাজনৈতিক ও সামাজিক সীমাবদ্ধতাকে পরিহার করে আইনের সঠিক বিধান নিশ্চিত করতে পারছেন না। পারতে হবে। নিয়ম মানার জন্য যে অর্থদন্ড দেয়ার কিংবা লাইসেন্স কেড়ে নেয়ার বিধান আছে, তাকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। এবং পরিপালনে হতে হবে কঠোর ও পক্ষপাতহীনভাবে।
দূরপাল্লার বাস, ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানগুলো যে হারে বাড়িয়ে চলছে দুর্ঘটনার সংখ্যা তাতে বলাই যায়-এই অপ্রতিরোধ্য মরণযাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনা না গেলে সময়ের ব্যবধানে তা মহামারিতে পরিণত হতে বাধ্য। আইন প্রযোগ করে হোক অথবা নির্বাহী নির্দেশের মাধ্যমেই হোক, পরিস্থিতির প্রয়োজনে এখন কঠোর হতেই হবে।