খোশ আমদেদ মাহে রমজান

ড. মাওলানা ইমতিয়াজ আহমদ:


পরম ভক্তি ও আবেগ নিয়ে হৃদয়ের গভীর থেকে সাদর সম্ভাষণে চির আকাক্সিক্ষত নেক আমলের বসন্তকাল পবিত্র রমজান মাসকে স্বাগত জানাই- আহলান, সাহলান, খোশ আমদেদ মাহে রমজান। মোবারক হো মাহে রমজান। বছর ঘুরে আমাদের মাঝে আবারো এলো অসীম রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের সওগাতে পূর্ণ বছরের শ্রেষ্ঠতম মাস রমজানুল মুবারক। এ বরকতময় মাস প্রদান করায় মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীনের দরবারে জানাই লাখো শুকরিয়া। আত্মশুদ্ধি আর আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের পূণ্যময় এ মাসটি বিশ্ব মুমিন-মুসলমানদের কাছে খুবই আনন্দের। কারণ সকল গাফিলতি ঝেড়ে নিজেকে শুধরে নেওয়ার এক সুবর্ণ সময় নিয়ে এসেছে পরিবর্তনের মাস এই রমজান। আল্লাহওয়ালারা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন কাক্সিক্ষত এই মাসের শুভাগমনের। পার্থিব লোভ-লালসা থেকে মুক্ত থাকার অভ্যাস গড়ে তোলা এবং ত্যাগ, সহিষ্ণুতা ও মানবিক মূল্যবোধে উজ্জীবিত হওয়ার প্রশিক্ষণে এ মাসের গুরুত্ব ও মর্যাদা অপরিসীম। আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দীর্ঘ দুমাস অর্থাৎ রজব ও শাবান ধরে অধীর আগ্রহে রমজানের জন্য অপেক্ষা করতেন এবং রমজানের যাবতীয় নেয়ামত অর্জনের জন্য প্রস্তুতি নিতেন। তিনি মহান আল্লাহর শাহী দরবারে দোয়া করতেন- আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফী রাজাবা ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগনা রামাদান- হে আল্লাহ, তুমি রজব ও শাবানে আমাদের বরকত দাও এবং আমাদেরকে রমজানে পৌঁছিয়ে দাও। আল্লাহর রহমতে আমরা পৌঁছে গেছি সেই কাক্সিক্ষত রমজান মাসে।

রহমত, বরকত ও নেয়ামতে পরিপূর্ণ ইবাদতের মাস রমজানের পরিচয় দিতে গিয়ে মহান রাব্বুল আলামীন বলেন, রমজান এমন এক মাস, যে মাসে কুরআন নাজিল করা হয়েছে। এরপরই তিনি বলেছেন, সুতরাং যে ব্যক্তি এ মাসটি পাবে, সে যেন অবশ্যই এ মাসে রোজা পালন করে। (সূরা বাকারা-১৮৫)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন, তোমাদের সামনে এমন এক বরকতময় মহান মাস ছায়াস্বরূপ আসছে, যাতে একটি রাত রয়েছে, যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। এ মাসকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যার প্রথম ভাগে রয়েছে রহমত, দ্বিতীয় ভাগে রয়েছে মাগফিরাত এবং শেষ ভাগে রয়েছে জাহান্নামের আগুন থেকে নাজাত বা মুক্তি। রমজান কল্যাণের মাস। সহমর্মিতার মাস। ধৈর্যের মাস। আর ধৈর্যের পুরস্কার জান্নাত। মাহে রমজানের বরকতে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় দোজখের দরজাগুলো। শয়তানকে বন্দী করা হয়। রমজানে কল্যাণকামীর জন্য প্রভূত কল্যাণ রয়েছে। তাই ঘোষণাকারী ঘোষণা করেন, হে কল্যাণকামী! সামনে অগ্রসর হও। হে অকল্যাণকামী! সংযত হও।

পারস্পরিক সহমর্মিতা, সোহার্দ্যবোধ, আত্মশুদ্ধি, ত্যাগের মহান শিক্ষা ও অনুশীলনে রমজানুল মুবারকের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সত্য-অসত্য, পাপ-পূণ্য ও ভালো-মন্দের যথার্থ উপলব্ধির মাধ্যমে মানবজীবনকে মহীয়ান ও সফল করে গড়ে তোলার লক্ষ্যেই রমজানুল মুবারকের শুভ আগমন। রমজানুল মুবারকের সিয়াম সাধনা সর্বক্ষেত্রে আমাদের জীবনকে করে পবিত্রময় ও ঐশ্বর্য্যম-িত। অত্যন্ত মহিমান্বিত ও ফজীলতপূর্ণ মাস রমজান গুনাহ মাফ করিয়ে নেওয়ার মাস। আমলের মধ্যে সময় অতিবাহিত করে আল্লাহ পাকের নৈকট্য অর্জনের মাস। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, রমজান মাসে কেউ যদি একটি নফল কাজ করে তাহলে সে ফরজের সমতুল্য সওয়াব পাবে। পক্ষান্তরে একটি ফরজ আদায় করলে অন্য মাসের সত্তরটি ফরজের সমতুল্য সওয়াব পাবে। তিনি আরও বলেন, যে রমজান পেল অথচ তার গুনাহ ক্ষমা করিয়ে নিতে পারল না সে চরম হতভাগা।

আল্লাহ রব্বুল আলামীন নিজের নাম রব্বুস সালেহীন বা নেককারদের রব বলেননি। তিনি নিজের নাম রব্বুল আলামীন বা সারা জাহানের রব বলেছেন। তিনি শুধু নেককারদের রব নন, তিনি পাপীদেরও রব। সেই পাপীদের পাপমোচনের জন্যই তাঁর পক্ষ থেকে অপার দান এ রমজানুল মুবারক। আজ পাপীদের জন্য তাওবার সকল দুয়ার খোলা। তাই আর গুনাহের সাগরে ডুবে থাকা নয়, আর নয় গাফিলতির মাঝে বিভোর থাকা। এখন সময় নিজেকে শুধরে নেওয়ার দৃঢ় প্রত্যয়ে জেগে ওঠার এবং সুবর্ণ এই সময়টাকে কাজে লাগানোর। এটাই হয়তো জীবনের শেষ রমজান, এ কথা ভেবে যাবতীয় এবাদত নিষ্ঠার সাথে আদায়ের মাধ্যমে রমজানের উদ্দেশ্য হাসিল করতে হবে।

পুরো রমজান মাস আমাদের সামনে। রোজা, তারাবীহ, তাহাজ্জুদ, কুরআন তেলাওয়াত, দান-সদকা ও অন্যান্য নেক আমলের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা তাঁর নৈকট্য অর্জন এবং সব ধরনের গুনাহ হতে বিরত থেকে হৃদয় ও আত্মার পরিশুদ্ধি অর্জন ও পাপমুক্তির তাওফীক দান করুন। ফলে মাস জুড়ে তাকওয়ার অনুশীলনের মাধ্যমে যেন তৈরী হয় বছরের বাকি দিনগুলোতে পাপ-পঙ্কিলতামুক্ত থাকার যোগ্যতা।
লেখক: পেশ ইমাম, বাংলাদেশ রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট জামে মসজিদ, রাজশাহী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *