জঙ্গলের খুপরিতে ১৬ বছর ধরে বসবাস

নিউজ ডেস্কঃ

রাগ বা অভিমান করে নয়, প্রতারণার ফলে উঠে যায় মানুষের ওপর থেকে বিশ্বাস। তাই নিজেই ঠাঁই নেন জঙ্গলে। সেখানে পলিথিন ও বাঁশ দিয়ে তৈরি করে নেন একটি খুপরি। এই খুপরিতে কাটিয়ে দেন একে একে ১৬ বছর।

জঙ্গলের খুপরি থেকে মাঝে মাঝেই দেখা মিলত শিয়াল, সাপ-বিচ্ছুর। এদের সঙ্গে অর্ধাহার-অনাহারে বসবাস তার। বয়স ছুঁয়েছে ৬০ বছর। এখনো তিনি চিরকুমার।

বউ রাখার ঘর না থাকায় বিয়েও করেননি বলে জানিয়েছেন মুজিবুর।

কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার ১০ নম্বর গুনাইঘর দক্ষিণ ইউনিয়নের মাশিকাড়া গ্রামের উত্তরপাড়া মৌলভীবাড়ির পাশের জঙ্গলেই মুজিবুরের খুপরি। সম্প্রতি তার খুপরির বিষয়টি ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বিষয়টি নজরে আসে স্থানীয় প্রশাসনের। মুজিবুরের সঙ্গে দেখা করতে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যান, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ এলাকার গণ্যমান্যরা।

সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বিশাল এক ঝোপ-বাঁশঝাড়। এটি পেরিয়ে জঙ্গলের মধ্যভাগে পলিথিনে মোড়ানো ছাউনির একটি ছোট খুপরি। সেখানে বসে আছেন ৬০ বছর বয়সী চিরকুমার মুজিবুর রহমান। প্রশাসনের লোকজন আসার সংবাদে বেরিয়ে আসেন খুপরি থেকে।

বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে কান্নাজড়িত কণ্ঠে খুপরিতে বসবাস করার কারণ জানান তিনি। অর্থ-বিত্তে সাজানো সংসার থেকে সৎভাইদের রোষানলে পৈতৃক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করায় তাকে জঙ্গলেই ঠাঁই নিতে হয়েছে।

মুজিবুর রহমান জানান, তার বাবা মরহুম লাল মিয়ার প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর দ্বিতীয় বিয়ে করেন তার মাকে। এই সংসারে একমাত্র সন্তান তিনি। প্রথম সংসারে দুই ভাই ফরিদুল ইসলাম ও জহিরুল ইসলাম। তার বাবা লাল মিয়া রেলওয়েতে চাকরি করতেন। সৎভাই ফরিদুল আলম পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে চাকরি করতেন। মুজিবুর কাইচপুর মালেক জুট মিলে চাকরি করে সৎভাই জহিরুল ইসলামকে বিএ পাস করান। সেই জহিরুল ইসলামই তার পৈতৃক সম্পত্তির ১০৫ শতাংশের মধ্যে ৮৫ শতাংশ জমি লিখে নেন। তাকেও বাড়ি থেকে বের করে দেন। স্থানীয়দের সহযোগিতায় ২০০৭ সাল থেকে জঙ্গলে খুপরি বানিয়ে ঠাঁই নেন মুজিবুর।

মুজিবুর বলেন, বিয়ে করে বউ রাখার ঘর নেই, তাই বিয়েটাও করতে পারিনি। মিলের চাকরি ছেড়ে বাড়িতে এসে ইলেকট্রিক লাইনের কাজ শুরু করি, একটি চোখও নষ্ট হয় যায়। বয়স হয়েছে, এখন কাজে নিতে চায় না কেউ। অর্ধাহার-অনাহারে, রোদ-ঝড়-বাদলে, শিয়ালের হাঁকডাকের মাঝেই খুপরির মধ্যেই থাকি। কখনো লাকড়ির চুলায় ভাত আর আলু সিদ্ধ করে লবণ-মরিচ দিয়ে খাই। কখনো শুকনা খাবার খেয়ে থাকি। 

তিনি দুঃখ করে বলেন, শিয়াল-শাপ-বিচ্ছু-মশা আমার ক্ষতি করেনি। মানুষ যা আমার সঙ্গে করেছে।

এ ব্যাপারে মুজিবুরের ভাই জহিরুলের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। জহিরুলের বড় ভাই ফরিদুল আলমের ছেলে আল-আমিন বলেন, আমার কাকা অভিমানী। আমার দাদার জায়গা-জমি ভাগ হয়নি এখনো, তবে চাচা কিছু জমি নিজ নামে লিখে নিয়েছে। কাকার পাওনা বুঝিয়ে দিতে আমাদের আপত্তি নেই।

১০ নম্বর গুনাইঘর ইউপি চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবির বলেন, বিষয়টি আমাকে কেউ জানায়নি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অবগত হয়েছি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিগার সুলতানা জানান, মুজিবুর রহমানকে তার বাবার জমির কাগজপত্র নিয়ে সাথে দেখা করার জন্য বলা হয়েছে। কাগজপত্র ঠিক থাকলে তার পাওনা জমি উদ্ধার করে দেওয়া হবে। না হয় আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ তাৎক্ষণিক চক্ষু চিকিৎসার জন্য ১০ হাজার টাকা প্রদান করেন এবং সচ্ছলতা আনয়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *