নাটোর প্রতিনিধি:
উত্তরের জেলা নাটোরে জমে উঠেছে বৃহৎ লিচুর মোকাম। জেলার গুরুদাসপুর উপজেলার বেড়গঙ্গারামপুর কানুমোল্লার বটতলা। লিচুর আড়তগুলোতে টসটসে লিচু সংগ্রহের কাজ শুরু হয়। বুধবার (১০ মে) দুপুরের দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ওই লিচুর আড়তের উদ্বোধন করেন, স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শ্রাবণী রায়।
এর পরেই শুরু হয় বেচা-কেনা। চলছে বেপারীদের হাঁকডাক। চাষী, বেপারী, আড়তদার ও শ্রমিকদের মাঝে আনন্দ উৎসবে পরিণত হয়েছে ওই লিচুর মোকাম।
জানা যায়, নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলায় এবছর ত লিচু চাষের লক্ষমাত্রা ৯শ ১৬ হেক্টোর জমিতে। গত বছর লিচু আবাদের লক্ষমাত্রা ছিল ৯শ ৪৭ হেক্টোর। সারে ৮ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নিয়ে এলাকায় মোজাফ্ফর জাতের আগাম লিচুর আবাদ হয়েছে। বৈশাখের শেষ সপ্তাহ থেকে এই লিচু সংগ্রহ শুরু হয়। গাছ থেকে সংগ্রহ করা লিচু দ্রুত মোকামে পাঠাতে প্রস্তত আড়তদার ব্যবসায়ীরা। ২০০০ সালে গড়ে উঠা এই লিচুর মোকামে দুরদুরান্ত থেকে আসা বেপারীদের থাকা খাওয়া ও সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছেন ইউএনও শ্রাবণী রায়।
উদ্বোধনী সভায় লিচু আড়তদার মালিক সমিতির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বলেন, মোকামে শতাধিক আড়তে সারাদিন লিচু পাইকারী বেচাকেনা হয়। এসব লিচু আবাদ ও বেচাকেনায় প্রতিদিন প্রায় ৭ হাজার শ্রমিক নিয়োজিত আছে। তবে তাপমাত্রা ৩০ থেকে ৩২ ডিগ্রির মধ্য থাকলে লিচুর ফলন আরো বেশি হত বলে জানান তিনি।
আড়তদার মালিক সমিতির সেক্রেটারী রেজাউল করিম ও আব্দুল মান্নান জানান, প্রতি হাজার লিচু ১ হাজার ৮শ থেকে ২ হাজার ২শ পর্যন্ত টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ বছর কমপক্ষে ১শ ২-৩ কোটি টাকার লিচু বেচাকেনা হবে এ মোকাম থেকে।
লিচু চাষি রবিউল করিম, আব্দুল্লাহ, ইউসুফ আলী, মোবারক আলীসহ অনেকে জানান, লিচুর ন্যায্য দাম পেয়ে তারা খুশি। এই আড়ত থেকে প্রতিদিন ৩০-৪০ ট্রাক লিচু (প্রতি ট্রাকে ২০০ ঝুড়ি, এক ঝুড়িতে ২ হাজার ২০০টি লিচু থাকে) ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা পাইকারি দামে কিনে নিয়ে যেত। দেশের অন্যান্য জায়গায় লিচর আবাদ মার খেলেও গুরুদাসপুরে এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে কৃষকরা লাভবান হবে বলে আশাবাদী তারা।
গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুনর রশিদ বলেন, উপজেলার ৪১০ হেক্টর জমির মধ্যে ৩৯৫ হেক্ট মোজাফ্ফর ও ১৫ হেক্টর জমিতে বোম্বাই ও চায়ানা-৩ জাতের লিচুর আবাদ হয়েছে। যার লক্ষ্য মাত্রা ৫৭০ টি বাগানে ৩ লাখ ৬৯০ মেট্রিক টন উৎপাদন হবে। যার বিক্রয়মুল্য হবে প্রায় ৫০ কোটি টাকা।
নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ জানান, এবছর আট হাজার ২শ টন লিচু আহরণ হবে। এছারাও রাসায়নিক পদার্থের অপব্যবহার রোধ করে পরিপক্ক ফল প্রাপ্তি, দীর্ঘ সময় ফল সংরক্ষণের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে কৃষি বিভাগ। ৯ মে থেকে মোজাফফর জাতের লিচু এবং ২৫ মে থেকে বোম্বাই ও চায়না-৩ জাতের লিচু আহরণের সময়সূচী প্রণয়ন করা হয়েছে।