নিউজ ডেস্কঃ
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা পিছিয়ে যেতে পারে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা করার কথা বলা হয়েছিল, কিন্তু নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত একাধিক উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন এবং জনসভার কর্মসূচি রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী। ফলে নির্বাচন কমিশন কিছু না বললেও একে তফসিল অন্তত এক সপ্তাহ পিছিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
সরকারি দলের একাধিক সূত্র জানায়, একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের উদ্বোধন করা এবং মেয়াদের শেষবেলায় নিজেদের আরেকটু গুছিয়ে নিতে চাইছে সরকার।
সে জন্য তারা নভেম্বরের প্রথমার্ধ পর্যন্ত সময় নিতে চায়। যদিও নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা বা তারিখ চূড়ান্ত করার ক্ষমতা একমাত্র নির্বাচন কমিশনের। তবে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে সরকারের সহযোগিতাও গুরুত্বপূর্ণ।
দলীয় একাধিক সূত্র মতে, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর সরকার শুধু নৈমিত্তিক কাজ করতে পারবে।
নির্বাচনকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করে এমন কোনো কাজ সরকার করতে পারবে না। যেমন—এ সময়ে প্রকল্পের কাজ উদ্বোধন।
চলতি অক্টোবর মাসে বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্প উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ২৮ ও ২৯ অক্টোবর আরো দুটি মেগাপ্রকল্প উদ্বোধন করবেন তিনি।
এর পরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের উদ্বোধন বাকি থাকবে। এ প্রকল্পগুলোর উদ্বোধনের তারিখ নভেম্বরের প্রথমার্ধে নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে সরকার মনে করছে, নভেম্বরের দ্বিতীয়ার্ধে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলে তাদের এই কাজগুলো করতে সুবিধা হয়।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশন খুব শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হয়ে যাবে। তখন কোনো উদ্বোধন আমরা করতে পারব না, সরকারের কোনো উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরুও করতে পারব না।
তখন আমরা জাস্ট রুটিন ওয়ার্ক করব।’ ওবায়দুল কাদের রবিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন।
২০ অক্টোবর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রো রেল উদ্বোধনের কথা ছিল। পরে তা পিছিয়ে ২৯ অক্টোবর নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে আগামী ২৮ অক্টোবর চট্টগ্রামের কর্ণফুলী টানেল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এ মাসেই এক দিনে তাঁর দেড় শ সেতু উদ্বোধনেরও কথা রয়েছে। এ মাসে টানা ব্যস্ত থাকায় নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহেও একাধিক প্রকল্প উদ্বোধনের সময় রেখেছে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, নবনির্মিত দুটি রেলপথ চলতি অক্টোবর মাসেই উদ্বোধনের প্রস্তুতি নিয়েছিল বাংলাদেশ রেলওয়ে। এ রেলপথ দুটি হলো চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার এবং খুলনা থেকে মোংলা। রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো প্রকল্পের উদ্বোধনী সারসংক্ষেপেও অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর সময় চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু বড় এই দুই প্রকল্পের উদ্বোধন চলতি মাসে হচ্ছে না।
রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আগামী ৯ নভেম্বর খুলনা-মোংলা রেলপথ এবং ১২ নভেম্বর দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ উদ্বোধনের জন্য প্রধানমন্ত্রী সময় দিয়েছেন। তিনি সশরীরে উপস্থিত থেকে এই দুই প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন বলে আশা করছি। উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে আমাদের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকবে।’
খুলনা বিভাগের সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা কালের কণ্ঠকে জানান, রেলপথ উদ্বোধনের দিনে খুলনায় আওয়ামী লীগের একটি জনসভায়ও অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই জনসভায় খুলনা বিভাগে আওয়ামী লীগের ১১টি সাংগঠনিক জেলার নেতাকর্মীরা উপস্থিত থাকবেন। এ জনসভা সফল করতে আগামী ১৯ অক্টোবর খুলনা ইউনাইটেড ক্লাবে বিভাগ আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা হবে। এতে বিভাগের ১১টি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, দল থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উপস্থিত থাকবেন।
খুলনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক কালের কণ্ঠকে জানান, আগামী ৯ নভেম্বর খুলনা সার্কিট হাউস ময়দানে আওয়ামী লীগের জনসভায় প্রধান অতিথি থাকবেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। এ উপলক্ষে খুলনা বিভাগের নেতাকর্মীরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, আগামী ১২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। উদ্বোধন অনুষ্ঠান নিশ্চিত হলে এ উপলক্ষে কক্সবাজারে আওয়ামী লীগের বড় জনসভা করার কথা রয়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একজন নেতা জানান, ১২ নভেম্বর কক্সবাজারে জনসভার বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত করেননি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর প্রধানমন্ত্রী ভোটারদের প্রভাবিত করতে পারে এমন কাজ করতে পারবেন না। নতুন প্রকল্প উদ্বোধন করতে পারবেন না। প্রধানমন্ত্রী ভোটারদের কোনো প্রতিশ্রুতি দিলে তা পরোক্ষভাবে নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে—এমন সম্ভাবনা থেকে যায়। ফলে তা নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন হবে।’
নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে বলা হয়েছে, আগামী নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। গত ২৯ সেপ্টেম্বর গাজীপুরের শ্রীপুরে এক অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার মো. আনিসুর রহমান বলেন, ‘আগামী বছরের জানুয়ারি মাসের ২৯ তারিখের মধ্যে আমাদের জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে হবে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তারিখ ঘোষণা করব যথাসময়ে। জাতির উদ্দেশে ভাষণের মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার তারিখ ঘোষণা করেন। আমরা সেটা নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে তফসিলের মাধ্যমে জানিয়ে দেব।’
নির্বাচনের তফসিল পেছানোর জন্য নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করা হবে কি না জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশনকে সরকারের সহযোগিতা নিতে হয়। ফলে দুই পক্ষের মধ্যে অনানুষ্ঠানিকভাবে নানা আলোচনা করা হয়ে থাকে। প্রধানমন্ত্রী যেহেতু নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে একাধিক কর্মসূচি রেখেছেন- তার মানে উনি নানা বিষয় বিবেচনায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।