ডেস্ক :
শতাব্দীর ভয়াবহতম ভূমিকম্পের ক্ষত মিটতে না মিটতেই তুরস্কে ভয়াবহ বন্যায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৪ জন হয়েছে। তাছাড়া নিখোঁজ রয়েছেন আরও অন্তত পাঁচজন। অন্যদিকে, মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) রাত থেকে প্রবল বৃষ্টিপাতের জেরে সৃষ্ট এ বন্যায় তলিয়ে গেছে দেশটির দক্ষিণপূর্বাঞ্চলের অসংখ্য ঘরবাড়ি, হাসপাতাল, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। খবর মেইল অনলাইনের।
স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বন্যায় যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকেই তুরস্কের ভূমিকম্প-বিধ্বস্ত দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে স্থাপিত তাঁবু ও কন্টেইনারে অবস্থান করছিলেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, বাড়তে থাকা কর্দমাক্ত পানির শক্তিশালী স্রোতে ভেসে যাচ্ছেন অনেকে। ভেসে যাচ্ছে আশেপাশে রাখা গাড়ি ও তাবু।
জানা যায়, বন্যায় দক্ষিণ-পূর্ব আদিয়ামান প্রদেশের তুত শহরে একজনের মৃত্যু হয়েছে। সানলিউরফা প্রদেশের গভর্নর সালেহ আয়হান জানিয়েছেন, বন্যায় তার এলাকার চারজন নিহত হয়েছেন। তবে পরবর্তী সময়ে উদ্ধারকারীরা সানলিউরফা’র একটি বাড়ির নিচতলায় আরও পাঁচ সিরিয়ান নাগরিকের মরদেহ খুঁজে পান। পরে আরও দু’জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়।
বৃষ্টির কারণে এ অঞ্চলের সব স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এই পরিস্থিতি আরও কিছু দিন থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তুরস্কের আবহাওয়া দপ্তরের (টিএসএমএস) পূর্বাভাসে ১৪ থেকে ২০ মার্চ পর্যন্ত দেশটির দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের জন্য অরেঞ্জ অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।
সম্ভাব্য অতিবর্ষণে দুর্ভোগের আশঙ্কা থাকা এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে আদিয়ামান, দিয়ারবাকির, এলাজিগ, মালত্য, কাহরামানমারাস, মারদিন, সিভাস, সানলিউরফা ও কিলিস প্রদেশ। গত মাসের ভূমিকম্পে এ এলাকাগুলোতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল।
দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুলেমান সোয়লু জানান, ১৬৩ জনের সমন্বয়ে গঠিত ১০টি দল বন্যাকবলিত এলাকার ২৫ কিলোমিটার জুড়ে অনুসন্ধান ও উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে। তবে খারাপ আবহাওয়া ও বন্যার পানির স্রোত খুবই শক্তিশালী হওয়ার উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে তীব্র ভূকম্পনে দুলে ওঠে তুরস্কের দক্ষিণ এবং সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল। রিখটার স্কেলে সেই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৮। এর কয়েক ঘণ্টা পরে ওই এলাকায় আবারও আঘাত হানে ৭ দশমিক ৬ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প।
প্রলয়ংকরী সেই দুই ভূমিকম্পে পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় দেশ দুটির বিশাল এলাকা। এতে প্রাণ হারান ৫১ হাজারেরও বেশি মানুষ।
কেবল তুরস্কেই প্রাণহানি হয়েছে ৪৫ হাজারের বেশি। এছাড়া ঘরবাড়ি হারিয়ে তাঁবুকেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন অথবা অন্য শহরে চলে গেছেন লাখ লাখ মানুষ।
কেবল তুরস্কের দুর্গত এলাকাগুলো থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজার মানুষকে। তুর্কি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভূমিকম্পের আঘাতে দেশটিতে অন্তত ১ লাখ ৭৩ হাজার ভবন ধসে পড়েছে অথবা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে তাঁবু, হোটেল অথবা অন্যান্য অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে থাকতে হচ্ছে ১৯ লাখেরও বেশি মানুষকে।
৬ ফেব্রুয়ারির সে ভূমিকম্পে তুরস্কের ১১টি প্রদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এর এক মাস পেরিয়ে গেলেও মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ, আজও অনেক ভুক্তভোগীকে শনাক্ত করা যায়নি। নিহত হিসেবে সরকারি খাতায় নাম ওঠেনি অনেকের। স্বজনেরা আজও তাদের হারানো প্রিয়জনদের খুঁজে ফিরছেন।
তথ্যসূত্র: জাগোনিউজ