নিউজ ডেস্ক
পরমাণুর উপকরণ ইলেকট্রন, প্রোটন এবং নিউট্রন— বিগ ব্যাংয়ের পরে তৈরি হলেও এই যে প্রায় শ’খানেক মৌলের পরমাণু তৈরি হল কী ভাবে? কী ভাবে তৈরি হল ক্যালসিয়াম, যা আমাদের হাড়ের মধ্যে থাকে, বা লোহা, যা আমাদের রক্তের মধ্যে থাকে? প্রায় ৭৫ বছর আগে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী ফ্রেড হয়েল, জিওফ্রে বারবিজ, মার্গারেট বারবিজ এবং উইলি ফাওলার এটা প্রমাণ করেন যে, পরমাণুর রান্নাঘর হল নক্ষত্র।
এখন প্রমাণ হল নানা পরমাণু, যা গোটা ব্রহ্মাণ্ড জুড়ে আছে এবং যা এক নক্ষত্র থেকে আর এক নক্ষত্রে ছড়ায়, বা এক গ্রহ থেকে আর এক গ্রহে, তা ছড়িয়ে পড়ে নক্ষত্রের বিস্ফোরণে বা সুপারনোভায়। ওই সব কসমিক ডাস্ট বা মহাজাগতিক ধূলিকণা সম্প্রতি শনাক্ত করেছেন এক দল বিজ্ঞানী, যাদের মধ্যে আছেন দুই বাঙালি বিজ্ঞানী কিশলয় দে এবং অর্কপ্রভ ষড়ঙ্গী। কিশলয় গবেষণা করেন আমেরিকায় কেমব্রিজের ইনস্টিটিউট ফর অ্যাস্ট্রোফিজ়িক্স অ্যান্ড স্পেস সায়েন্সেস-এ আর অর্কপ্রভ ডেনমার্কের কোপেনহাগেনে বিখ্যাত নিলস বোর ইনস্টিটিউটে। ওঁদের পেপার প্রকাশিত হয়েছে ‘মান্থলি নোটিসেস অব রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি’ জার্নালে।
পেপারের নাম ‘জে ডব্লিউ এস টি অবজারভেশন অব ডাস্ট রিজার্ভায়ার্স ইন টাইপ টু পি সুপারনোভি ২০০৪ ই টি অ্যান্ড ২০১৭ ই এ ডব্লিউ’। ওই দু’টি সুপারনোভা আবিষ্কৃত হয় যথাক্রমে ২০০৪ এবং ২০১৭ সালে। যেমন ১৯৮৭ সালে আবিষ্কৃত হয়েছিল এক নক্ষত্রের বিস্ফোরণ (১৯৮৭এ)। ২০০৪ ই টি আর ২০১৭ ই এ ডব্লিউ এন জি সি-৬৯৪৬ গ্যালাক্সিতে। এন জি সি-৬৯৪৬-র চালু নাম ফায়ারওয়ার্কস গ্যালাক্সি। সত্যিই ওই গ্যালাক্সিতে প্রায়ই কোনও না কোনও নক্ষত্রের বিস্ফোরণ ঘটছে। ওই দু’টি সুপারনোভা পৃথিবী থেকে ২.২ কোটি আলোকবর্ষ দূরে আছে।
২০০৪ ই টি এবং ২০১৭ ই এ ডব্লিউ সুপারনোভা দু’টি বিশ্লেষণ করতে কিশলয় আর অর্কপ্রভরা কাজে লাগিয়েছিলেন মহাশূন্যে ভাসমান জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপে বসানো মিড-ইনফ্রারেড যন্ত্র। ওই যন্ত্রে দু’টো সুপারনোভারই মহাশূন্যে ফেলে দেওয়া প্রচুর পরিমাণে মহাজাগতিক ধূলিকণা দেখা গিয়েছে। ওই সব ধূলিকণা বুঝিয়েছে প্রাচীন ব্রহ্মাণ্ডে সুপারনোভার গুরুত্ব।
মেলিসা শাহবান্দে, যিনি মেরিল্যান্ডে স্পেস টেলিস্কোপ সায়েন্স ইনস্টিটিউটে গবেষণা করেন এবং এই পেপারের প্রধান লেখিকা, তিনি বলেছেন, “আগে কখনও এ ধরনের গবেষণা করা হত না। এখন জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপে বসানো মিড ইনফ্রারেড যন্ত্রে করা যাচ্ছে। ১৯৮৭এ সুপারনোভার ক্ষেত্রে মাত্র ১ লক্ষ ৭০ হাজার আলোকবর্ষ দূরেথাকায় ওই নক্ষত্র বিস্ফোরণ গবেষণা করা গিয়েছিল।”
তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা