নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। প্রায় বছরখানেক থেকে নেই নিয়মিত উপাচার্য। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে উপ-উপাচার্যের পদটি শূন্য গত নয় বছর থেকে।সর্বশেষ নিয়মিত উপাচার্য রফিকুল ইসলামের মেয়াদ শেষ হয় গতবছরের ৩০ জুলাই। পরদিন গত বছরের ১ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের দৈনন্দিন প্রশাসনিক ও আর্থিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় ফলিত বিজ্ঞান ও মানবিক অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাজ্জাদ হোসেনকে উপাচার্যের অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান করা হয়। অধ্যাপক সাজ্জাদ হোসেন গত ২৮ মে পদত্যাগ করেন। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত নতুন কোনো উপাচার্য ও উপাচার্য নিয়োগ করা হয়নি।এ অবস্থা প্রশাসনে শূন্যতা সৃষ্টি করে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম ব্যাহত করছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তারা। তারা জানান, উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের অনুপস্থিতিতে ফলাফল প্রকাশ, মার্কশিট ও সার্টিফিকেট প্রদান, বিভিন্ন কমিটির সভা করা, পদোন্নতি ও প্রয়োজনীয়তা অনুমোদন এবং অনাপত্তি সনদ প্রদানসহ দৈনন্দিন কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।রুয়েট রেজিস্ট্রার অফিস জানিয়েছে, বিভিন্ন অনাপত্তির জন্য পঞ্চাশটির বেশি আবেদন পাওয়া গেছে। তবে উপাচার্যের স্বাক্ষরের প্রয়োজন হওয়ায় তারা কাগজপত্র সরবরাহ করতে পারেনি। এছাড়া বিভিন্ন সেমিস্টারের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। প্রতিটি বিভাগের ফলাফল প্রকাশও বন্ধ রাখা হয়েছে।মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী নুরুল ইসলাম বলেন, ২৬ জুলাই থেকে অষ্টম সেমিস্টারের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শিক্ষকরা বলছেন, উপাচার্যের অনুমোদন ছাড়া পরীক্ষা দিতে পারবেন না। এতে সবার মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। সময়মতো পরীক্ষা শুরু নাহলে সেশনজট হতে পারে।রুয়েটের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তৌহিদ আরিফ খান চৌধুরী বলেন, পরীক্ষা আয়োজনের জন্য বিভিন্ন কমিটি গঠন করা প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী উপাচার্য ছাড়া অন্য কেউ এসব কমিটি অনুমোদন করতে পারবেন না। উপাচার্য না আসা পর্যন্ত আমাদের পরীক্ষা নেওয়ার ক্ষমতা নেই।রুয়েট শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রবিউল আউয়াল বলেন, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে শেষ নোটিশের পর থেকে নতুন কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৮০ জন শিক্ষক গত ১৬ মাস ধরে তাদের প্রাপ্য পদোন্নতি ও আপগ্রেডেশন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। প্রাপ্য পদোন্নতি না পেয়ে অনেক শিক্ষকের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে। নতুন উপাচার্য না আসা পর্যন্ত সবাইকেই অপেক্ষা করতে হচ্ছে।রুয়েটের অর্থ কমিটির সদস্য সচিব নাজিম উদ্দিন আহমেদ জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণসহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজ থমকে গেলেও উপাচার্য না থাকায় আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট চূড়ান্ত করতে তারা চরম সঙ্কটে পড়েছেন। বাজেটে তৈরি করা হলেও উপাচার্য না থাকায় তা পাস করা সম্ভব হচ্ছে না।রুয়েটের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক সেলিম হোসেন বলেন, উপাচার্য ছাড়া সিন্ডিকেট ও অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলসহ বিভিন্ন কমিটির সভা করতে না পারায় সকল কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। গত ১৮ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থার পরিস্থিতি সম্পর্কে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করো হয়েছে। শূন্যপদগুলো প্রতিষ্ঠানের অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হওয়ায় তাদের সমস্যার অবিলম্বে সমাধান চেয়ে আবারও একটি চিঠি দেওয়া হবে। আশা করা যায় খুব তাড়াতাড়ি সমাধান হবে।এদিকে, ২৬ জুলাই থেকে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে শনিবার (২২ জুলাই) প্রশাসন ভবনে বিক্ষোভ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭তম সিরিজের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা জানান, একই সেশনের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্নাতকোত্তর পর্যন্ত শেষ করেছে। অথচ আমরা এখন স্নাতক সম্মানই শেষ করতে পারলাম না। যথাসময়ে পরীক্ষা সম্পন্ন হচ্ছে না। বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের বারবার বলেও কোনো সমাধান হচ্ছে না। পরীক্ষার তারিখ দিলেও সেটা পিছিয়ে যাচ্ছি। তাই দ্রুত পরীক্ষার দাবিতে আমরা আন্দোলনে বসেছি।২০১৭-১৮ সেশনের স্নাতক শেষ বর্ষের পরীক্ষা আরও আগে সম্পন্ন হওয়ার কথা। কিন্তু নানা জটিলতায় সেটা বারবার পিছিয়েই যাচ্ছে। ফলে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ও ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা এই আন্দোলনে বসেন। পরে জরুরি সভায় দ্রুত পরীক্ষা গ্রহণের আলোচনা হয়। কয়েক দিনের মধ্যেই পরীক্ষার নতুন তারিখ ঘোষণার কথা জানায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক সেলিম হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে একটি জরুরি সভা হয়েছে। সেখানে দ্রুত পরীক্ষা গ্রহণে সিদ্ধান্ত হয়েছে। মূলত উপাচার্য না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন নানা সংকট সৃষ্টি হয়েছে। আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বরাবরই নতুন উপাচার্য নিয়োগের ব্যাপারে জানিয়ে আসছি। কিন্তু সেটার কার্যকরি কোনো সমাধান হচ্ছে না। রোববার (২২ জুলাই) আমরা মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠাব। আমরা চাই দ্রুত উপাচার্য নিয়োগ অথবা অন্য কারো ওপর সাময়িক দায়িত্ব অর্পণ করুক। যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও অ্যাকাডেমিক সঙ্কটগুলো দ্রুত সমাধান হয়।