বাগমারায় আগুনে পুড়ে স্কুল শিক্ষিকা মা ও ছেলের করুন মৃত্যু

বাগমারা প্রতিনিধি
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার গণিপুর ইউনিয়নের মাদারীগঞ্জ (হাসনীপুর) বাজারের তিনতলা একটি ভবনে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় স্কুল শিক্ষিকা মা ও ছেলের করুণ মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনায় দগ্ধ বড় ছেলে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। গত শুক্রবার ভোরে উপজেলার হাসনিপুর গ্রামের মাদারীগঞ্জ বাজারে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত স্কুল শিক্ষিকার নাম ফরিদা ইয়াসমিন (৪৫) ও তাঁর ছেলের নাম রাফিউল বাশার (২০)। ফরিদা ইয়াসমিন রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার শিবপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এবং বাগমারার হাসনিপুর গ্রামের এজাজুল বাশার ওরফে স্বপনের স্ত্রী। ছেলে এবার উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। রাফিউলের শরীরের ৫০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল।
এলাকাবাসী বলেন, তিনতলা ভবনটি এক সময় ছিল আশা সিনেমা হল। সিনেমা হলটি বন্ধ হওয়ার পর স্থানীয় বাসিন্দা ও দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টেকনোলোজিস্ট (রেডিওলোজিস্ট)এজাজুল বাশার স্বপন কিনে নেন। সিনেমা হলের তিন তলায় তিনি পরিবার নিয়ে থাকতেন। কয়েকজন ভাড়াটেও ছিলেন। তবে ঈদের কারণে তাঁরা গ্রামের বাড়িতে গেছেন। এ ছাড়া ভবনের অধিকাংশ স্থান বিভিন্ন পণ্যের গুদাম হিসেবে ব্যবহৃত হতো। অগ্নিকান্ডের সময় এজাজুল বাশার বাসায় ছিলেন না। তিনি রাজশাহী শহরের বাড়িতে গিয়েছিলেন।
স্থানীয়, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার রাতের খাবার খেয়ে দুই ছেলেকে নিয়ে তিনতলার বাসায় ঘুমিয়ে পড়েন স্কুল শিক্ষিকা ফরিদা ইয়াসমিন। রাত অনুমানিক দুইটা থেকে তিনটার মধ্যে কোন এক সময় বাসার রান্নার চুলা থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। এ সময় আগুন পুরো বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। পরে প্রতিবেশীরা টের পেয়ে চিৎকার শুরু করেন। তাঁদের চিৎকারে ও আগুনের শিখা দেখতে পেয়ে আশপাশের লোকজন ছুটে আসেন। তাঁরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। তবে আগুন ছড়িয়ে যাওয়ায় তা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছিলেন না লোকজন। পরে ফায়ার সার্ভিসে খবর দেওয়া হলে বাগমারা ও মোহনপুর থেকে দুটি করে চারটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন। ততক্ষণে বাড়িতে থাকা বিভিন্ন আসবাবপত্র ও মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শী জাকিরুল ইসলাম নামের এক স্থানীয় শিক্ষক বলেন, তাঁরা আগুন নেভানোর সময় দেখতে পান, তিনতলা থেকে দুই ভাই রাশেদুল ও রাফিউল দগ্ধ অবস্থায় লাফ দিয়ে নিচে পড়ে যান। দ্রুত তাঁদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর তাঁরা বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে তিনতলার একটি কক্ষে স্কুল শিক্ষিকা ফরিদা ইয়াসমিনের পোড়া লাশ পান। বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে ঢাকায় পাঠানোর পর শুক্রবার সন্ধ্যায় ছোট ছেলে রাফিউল বাশার (১৮) মারা যান। শনিবার (১জুলাই) ভোরে তাঁর মরদেহ গ্রামে পৌঁছায়। সকাল সাড়ে ১০টায় হাসনিপুর গ্রামে মায়ের কবরের পাশে লাশ দাফন করা হয়।
নিহত শিক্ষকের স্বামী এজাজুল বাসার স্বপন বলেন, আগুনের কারণ তিনি জানেন না। ঢাকায় চিকিৎসাধীন বড় ছেলের কাছে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। বড় ছেলে শঙ্কামুক্ত বলে চিকিৎসকেরা তাঁকে জানিয়েছেন। মুঠোফোনে ছেলের সঙ্গে কথাও হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বপন।
বাগমারা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা মেহেদি হাসান বলেন, আগুনের সূত্রপাত এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে সেখানে রান্নার ব্যবস্থা ছিল। খড়ির চুলার আগুন থেকেই মূলত আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে ধারনা করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *