ভবানীগঞ্জ বাজারে যানজট
বাগমারা প্রতিনিধি
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা সদর ভবানীগঞ্জ পৌর বাজারে যানজট এখন নিত্যদিনের সমস্যা। সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি লেগে থাকে এই যানজট। বাজারের সিএসজি ষ্ট্যান্ড, ভবানীগঞ্জ বাজার জিরো পয়েন্ট, কলেজ মোড়, গোড়াউন মোড় সহ গোটা বাজারে দিনভর লেগে থাকে প্রকট যানজট। বাজারের ব্যবসায়ী সহ পথচারীরা বলছেন, যত্রতত্র ভ্যান ও ব্যাটারী চালিত অটোরিকশা পাকিং, বাজারের ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে দোকানপাট বসানো, হাটের দিন সহ বিভিন্ন দিনে ট্রাকে মালামাল লোডিং আনলোডিং, যেখানে সেখানে মোটরসাইকেল পাকিং সহ নানান কারণে এই বাজারের যানজট কমছেই না। এছাড়া বাজারের একমাত্র বাইপাস সড়ক কলেজ মোড় থেকে গোড়াইন মোড়ের রাস্তাটি সংস্কারে ধীরগতিতে সেখানে ভারী যানবাহন চলাচল করতে না পারায় ওই সমস্ত ভারি যানবাহনগুলো বাজারের মধ্যে দিয়ে চলাচল করার কারণে যানজট আরো প্রকট আকার ধারন করেছে বলে জানা গেছে।
অসহনীয় ও শৃঙ্খলাহীনতার কারণে এই যানজটের কবলে পড়ে কাহিল হয়ে পড়েছে বাজারে আগত ব্যবসায়ী, পথচারী ও স্কুলগামী কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। মাঝে মাঝে পৌর মেয়র নিজেও এই যানজটের কবলে আটকা পড়েন। সম্প্রতি এই যানজটের কবলে পড়ে মেয়র নিজেই মোটরসাইকেল থেকে নেমে পায়ে হেঁটে গন্তব্য স্থানে যেতে বাধ্য হন।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সূত্রে জানা গেছে, ভবানীগঞ্জ বাজারের আশেপাশে রয়েছে বেশকিছু স্কুল কলেজ মাদ্রাসা সহ বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত আসা যাওয়া করে থাকে। তবে যানজটের কারণে তাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। বিশেষ করে সোমবার হাট বারে ছাগল ও মুরগীর হাট বসার কারণে ভবানীগঞ্জ হাইস্কুল রোডে ব্যাপক যাজটের সৃষ্টি হয়। এছাড়া বাজারের অনেক প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা হাটের দিন ও অফিস টাইমের সময় বাজারের মূল রাস্তার উপর ঘন্টার পর ঘন্টা ট্রাক দাঁড় করিয়ে রেখে মালামাল লোডিং আনলোডিং করার কারণে যানজট আরো বেড়ে যায়। ক্ষমতাশীন দলের ও প্রভাবশালী হওয়ায় এই সমস্ত ব্যবসায়ীদের হটকারি কাজের কেউ প্রতিবাদ করার সাহশ পায় না। বাজারে যানজটের এই মানবসৃষ্ট কারণ ছাড়াও রয়েছে আরো রয়েছে হাট ইজারাদারের অতি মুনাফা ও সরকার নির্ধারিত খাজনার চেয়ে ৫/৭ গুণবেশি হারে খাজনা আদায়ের মানসিকতা। এই হাটের ইজারাদাররা ব্যাপক বেশি হারে খাজনা আদায় করে থাকে। তার ওপর আরো বেশি টাকা আদায়ের জন্য যেখানে সেখানে ভ্রাম্যমান দোকান ও হকার বসিয়ে যানজটের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয় বলে সাধারন পথচারীরা জানান।
ফলে বাজারের যানজট প্রতিদিন বেড়েই চলেছে। কোনভাবেই এর নিয়ন্ত্রন করা যাচ্ছে না। স্থানীয়রা এই সমস্যা নিরসনে বাজারের গুরুত্বপূর্ন স্থানে ট্রাফিক সদস্য নিয়োগ ও অবিলম্বে কলেজ মোড় টু গোডাউন মোড়ের বাইপাস সংস্কার কাজ শেষ করে ওই পথে ট্রাক সহ ভারি যানবাহন চলাচলের সুযোগ সৃষ্টি করা হলে বাজারের যানজট অনেক কমে আসবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ভবানীগঞ্জ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের প্রভাষক মাহবুবুর রহমান জানান, এখানে পরিকল্পনার ত্রুটি রয়েছে। এছাড়া দায়িত্বশীলরা চরমভাবে উদাসীন। ভবানীগঞ্জ কারিগরি ও ব্যবস্থাপনা কলেজের অধ্যক্ষ আতাউর রহমান শিবলী ও ভবানীগঞ্জ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নাদিরুজ্জামান মিলন বলেন, আপতত যানজটপ্রবণ এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ নিয়োগ করে সাময়িক যানজট মুক্ত করা সম্ভব।
বিষয়টি পৌরকর্তৃপক্ষের গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলে তারা জানান। ভবানীগঞ্জ বাজার বনিক সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম হেলাল বলেন, যানজটের স্থায়ী সমাধানের জন্য বাজারের রাস্তা প্রশস্থকরণের কথা আমরা বারবার বলে আসছি। এ জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত প্রস্তাব/আবেদন জমা দিয়েছি। পৌরসভার সহকারি প্রকৌশলী লিটন মিয়া বলেন, বাইপাস রাস্তার সংস্কার কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য ঠিকাদারকে বিশেষ তাগাদা দেওয়া হয়েছে।
ভবানীগঞ্জ পৌর মেয়র আব্দুল মালেক মণ্ডল বলেন, দ্রুত বাইপাশ চালুর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এছাড়া বাজারের উন্নয়নে একটা মাষ্টার প্লান করা হয়েছে। অচিরেই এই কাজ শুরু হবে।