যোগ্যতা, দক্ষতা ও জনপ্রিয়তায় মিলবে নৌকার টিকিট, এমপির বিরুদ্ধে বিষোদগার নয়

আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে কথা বলছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নিউজ ডেস্কঃ

যোগ্যতা, দক্ষতা ও জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হবে। দলের বর্তমান সংসদ সদস্যদের (এমপি) বিরুদ্ধে ঢালাও সমালোচনা-বিষোদগার করে মনোনয়ন পাওয়া যাবে না। কেবল সেটাই নয়, কোনও এমপির বিরুদ্ধে দলের কোনও স্তরের নেতা সমালোচনা করা বন্ধ না করলে দলেও তার জায়গা থাকবে না।

আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে নেতাদেকে হুঁশিয়ার করে এমন সাফ কথা জানিয়ে দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলা ট্রিবিউনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন দলের একাধিক নেতা।
এর আগে ৬ আগস্ট অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায়ও এমন অবস্থানের জানান দিয়েছিলেন দলের প্রধান।

সূত্র জানায়, কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে দলের সভাপতি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে৷ এ ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় তিনি সকলকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন৷ এক্যবদ্ধভাবে ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে৷ পাশাপাশি নির্বাচনের চ্যালেঞ্জও এক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করতে হবে৷ সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে। জনগণের পাশে থাকতে হবে। প্রার্থী নয়, দলের পক্ষে, নৌকার পক্ষে ভোট চাইতে মানুষের দরজায় যেতে হবে।

সূত্র জানায়, সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের নেতাকর্মীদের নির্বাচনি প্রচার জোরেশোরে শুরু করতে বলেছেন৷ এ সময় সরকারের এই দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছরের উন্নয়নগুলো ভালোভাবে তুলে ধরতে বলেছেন৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মনোনয়ন প্রত্যাশীদের অনেকে দলের এমপিদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছেন৷ কার কী অবস্থা সব তথ্য আমার কাছে আছে৷

জনপ্রিয়তা যাচাই-বাছাই করেই আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হবে৷ এগুলো করে দলের মধ্যে বিভেদ তৈরি করা যাবে না। যারা এমপিদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছে তারা মনোনয়ন পাবে না৷ বিষোদগার করলে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে৷ নির্বাচনে সারা দেশে দলের প্রার্থীদের কী অবস্থা, কোথায় কী অবস্থা হবে তার রিপোর্ট তিনি তৈরি করছেন৷ ইতোমধ্যে দুই বিভাগের রিপোর্ট তৈরির কাজ শেষ হয়েছে বলেও সভায় জানিয়েছেন৷

তিনি বলেন, কী হলে, কী হবে—সব ছবি আমার কাছে স্পষ্ট৷ দুই বিভাগের কাজ শেষ করেছি, বাকিগুলোও তাড়াতাড়ি করে ফেলা হবে৷
সূত্র জানায়, সভাপতি শেখ হাসিনা দলের নেতাকর্মীদের নির্বাচনি প্রচার জোরেশোরে শুরু করার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থেকে অত্যাচার-নির্যাতন, সন্ত্রাস, হত্যা, দুর্নীতি, অর্থপাচার, জঙ্গিবাদ সৃষ্টিসহ যে অনিয়মগুলো করেছিল— তা ভালোভাবে বার বার তুলে ধরতে হবে৷ মানুষ বেশি দিন মনে রাখতে পারে না, ভুলে যায়, অনেকেই ভুলে গেছে৷ মানুষকে আবার ভালোভাবে এগুলো মনে করিয়ে দিতে হবে৷ অতীতে তারা ক্ষমতায় থেকে যেসব অত্যাচার, লুটপাট, অনিয়ম করেছিল— আবার সেগুলো করবে৷ এগুলোর করার জন্য আবারও তারা ক্ষমতায় আসতে চায়৷ মানুষকে এসব জানাতে হবে ৷

সভায় সুনামগঞ্জ জেলার কমিটি নিয়ে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জেবুন্নেসা হক অভিযোগ করেন— কমিটিতে ত্যাগীদের বাদ দেওয়া হচ্ছে। এসময় অভিযোগ সত্য নয় দাবি করে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন বলেন, উনি কমিটিতে রাখার জন্য দুই জনের নাম দিয়েছেন। সেখানে একজনকে রাখা সম্ভব হয়েছে, একজনকে রাখা যাচ্ছে না। দলীয় সভাপতি বলেন, দুইজন-একজন বলে কোনও কথা নাই। ত্যাগী সকল নেতাকর্মীকে জায়গা করে দিতে হবে। এসময় দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা আরও নির্দেশনা দেন পুরনো ত্যাগী কোনও নেতাকে কমিটি থেকে বাদ দেওয়া যাবে না। তারাই এ দলের প্রাণ।

সভায় চুয়াডাঙ্গা, নোয়াখালী ও শেরপুরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন হচ্ছে না সে প্রশ্ন তুলে শেখ হাসিনা বলেন, সময়মতো ও নির্ধারিত সময়ে কমিটি করতে না পারলে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দাও সেসব নেতাদের।

সূত্রে জানা গেছে, ৬ আগস্ট গণভবনে অনুষ্ঠিত বিশেষ বর্ধিত সভায় তৃণমূলের সাংগঠনিক জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যারা ভারপ্রাপ্ত আছেন, তাদের ভারমুক্ত ঘোষণা করেছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। দলীয় সভাপতির সেই সিদ্ধান্ত শনিবার অনুষ্ঠিত কার্যনির্বাহী সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়।

জানা গেছে, শনিবারের সভায় আওয়ামী লীগের আটবিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকেরা তাদের রিপোর্ট দিয়ে বক্তব্য রাখেন। তারা দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক জেলার কমিটি গঠন এবং সমস্যা সম্পর্কে দলীয় প্রধানকে জানান। এসময় আওয়ামী লীগ সভাপতি তাদের বলেন, দলের দুঃসময়ের যারা ছিল, যারা দলের জন্য নানান ত্যাগ স্বীকার করেছেন তাদের বাদ দেওয়া যাবে না। একই সঙ্গে পুরানো কমিটিতে যারা ছিল, তাদেরও যেন কমিটিতে রাখা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *