নিউজ ডেস্কঃ
শিগগিরই রাজশাহীতে ফিটনেসবিহীন বাস ও ট্রাকের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) ও রাজশাহী প্রশাসন এই অভিযান পরিচালনা করবে। বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) সকালে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘জেলা সড়ক নিরাপত্তা কমিটি’ ও ‘জেলা যাত্রী ও পণ্য পরিবহন কমিটি’র যৌথসভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সভায় আলোচ্য বিষয়গুলো ছিল, আসন্ন পবিত্র ইদ-উল-ফিতর উপলক্ষ্যে ঘরমুখো যাত্রীদের যাতায়াত, নিরাপত্তা নির্বিঘœ নিশ্চিত করতে এই অভিযান পরিচালিত হবে।
অনুষ্ঠিত দুটি সভায় সভাপতিত্ব করেন, রাজশাহী জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল। সভায় বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) এর পরিচালক, রাজশাহী জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন, রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুপের নেতৃবৃন্দসহ অন্য সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় যাত্রী ও পণ্য পরিবহন নিয়ে আলোচনা করা হয়। আলোচনার এক পর্যায়ে যাত্রীদের নিরাপত্তা ও নিরাপদে পণ্য পরিবহনের বিষয়গুলো সভায় উঠে আসে। রাজশাহীতে চলাচল করা যাত্রীবাহী বাসের ফিটনেস ও আসন বিন্যাসের বিষয়টি গুরুত্ব পায়। আন্তঃজেলা ও উপজেলার মধ্যে চলাচলকারী কতিপয় বাসের মালিক অবৈধ উপায়ে আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করে থাকেন। এর ফলে যাত্রীরা সিটে বসার পরে সামনের আসনের সাথে হাঁটু আটকে যায়। যাত্রী সিট পেয়েও ঠিক মতো বসতে না পারায় অস্বস্তি ও কষ্টকর ভ্রমণ করতে বাধ্য হয়। এসব অবৈধ গাড়ির বিরুদ্ধেও অভিযান পরিচালিত হবে।
সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়- ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচলের কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বেশি ঘটে। এ ধরনের বাস চলাচল যাত্রী সাধারণের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এমন বাস চলাচল করতে দেয়া যাবে না। একই সাথে বাসে চালক ও সহযোগীদের ছবিসহ নাম ও মুঠোফোন নম্বর লেখা একটি বোর্ড রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়। যাতে করে সহজেই বাসের কর্মচারিদের চিহ্নিত করা যায়। এটি নিশ্চিত করতে এক মাসের সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। একমাস পর অন্যথাকারীদেন বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) একটি সূত্র জানায়, ‘ব’ সিরিজের গাড়িগুলো ৫২ আসনের হয়, আর ‘জ’ সিরিজের গাড়িগুলো ৩১ আসনের। জ- শ্রেণির গাড়িগুলো নিবন্ধনের পর কোনো কোনো মালিক অবৈধভাবে আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করে যাত্রীদের ভোগান্তির মধ্যে ফেলে।
জানা গেছে, রাজশাহী জেলার তানোর, মোহনপুর, চারঘাট, বাঘা রুটে বেশি ‘জ’ সিরিজের ছোট গাড়ি চলাচল করে। এই গাড়ি কোনো কোনোটিতে আসন বিন্যাসের সমস্যা রয়েছে। বাসগুলোতে জায়গার তুলনায় আসন বেশি। ফলে নির্ধারিত আসনের দূরত্ব মানা হয়নি। বাসের মালিকরা নিজেদের পছন্দ মতো আসন বসায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বাসচালক জানান, বেশি যাত্রী পরিবহণ করতে পারলে আমাদের ভালো। বেশি টাকা পাব। কিন্তু আসন নিয়ে যাত্রীরা আমাদের বিভিন্ন কথা শোনায়। বিষয়গুলো আমাদের খারাপ লাগে। অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটলে ফিটনেস নিয়ে কথা উঠে। আমাদের চালকদের পুলিশে ধরে নিয়ে যায়। আমরাও চায় ফিটনেসবিহীন বাস না চালাতে।
রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মতিউল হক টিটো জানান, ফিটনেসবিহীন যানবহনের বিরুদ্ধে অভিযানের বিষয়ে আমরাও অন্তরিক। আমরা বাস মালিকদের সাথে বসবো। তাদের সমস্যাগুলো বের করে সমাধানের বিষয়ে বলবো।
রাজশাহী জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব হোসেন বলেন, যাত্রীবাহী বাসের ফিটনেস ও আসন বিন্যাস নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বাসের জায়গার তুলনায় আসন বেশি থাকে। ফলে যাত্রীদের হাঁটু সামনের সিটে আটকে যায়। এতে আসনে বসে কষ্ট পায় যাত্রীরা। আমরা ফিটনেস বিহীন আসনের বিরুদ্ধে অভিযানের বিষয়ে একমত। কারণ একটা দুর্ঘটনার পরে পুলিশ আগেই সেই গাড়ির ফিটনেস ধরে। তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। এতে করে বাসের চালক নানান সমস্যায় জড়িয়ে পড়ে।
আমরা চাই না, আমাদের কোনো বাস শ্রমিক মামলায় জড়াক। তাই আমরাও বাসের ফিটনেসবিহীন অভিযানে অন্তরিক। এছাড়া বাস মালিকদের সাথে তারাও নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করবে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন ওয়ার্কসপে বাসের সঠিক আসন বিন্যাস নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, রাজশাহী জেলা প্রশাসক মহোদয় আরো একটি নির্দেশ দিয়েছেন। সেটি হলো- বাসে চালক ও সহযোগীদের নাম ও মুঠোফোন নম্বর থাকবে। তাদের নাম ও নম্বর একটি বোর্ডে লেখা থাকবে। যাত্রীদের সহযোগিতায় এই কাজ করা হবে। আমরা এক মাসের সময় নিয়েছি। আগামি এক মাসের মধ্যে প্রতিটি বাসে চালক ও সহযোগীদের নাম ও মুঠোফোন নম্বর লেখা থাকবে।
রাজশাহী মেট্রোপলিন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) রফিকুল আলম বলেন, আমরা এই বিষয়ে আন্তরিক। আমরাও চাই, ফিটনেসবিহীন গাড়ি যেনো সড়কে না থাকে। এই জন্য অভিযানের সময়ে পুলিশের পক্ষ থেকে সবধরনের সহযোগিতা থাকবে।