রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষের ঘটনায় আগামীকাল রোববার (১২ মার্চ) ও সোমবার (১৩ মার্চ) রাবির ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, বিনোদপুর বাজার ও এর আশপাশের এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
এ ঘটনায় উভয়পক্ষের অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এমন পরিস্থিতিতে রাবি ক্যাম্পাস ও এর আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশের পাশাপাশি সাত প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
শনিবার (১১ মার্চ) রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর প্রশাসক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
রাতে পাঠানো এক জরুরি বার্তায় তিনি বলেন, অনিবার্য কারণবশত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ থাকবে।
আগামী ১৪ মার্চ মঙ্গলবার থেকে ক্লাস ও পরীক্ষাসমূহ যথারীতি চলবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর গোলাম সাব্বির সাত্তার তাপুর এক আদেশে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এর আগে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। শনিবার (১১ মার্চ) বিকেল ৫টা থেকে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। রাত ১০ পর্যন্ত থেমে থেমে সংঘর্ষ চলে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকসহ অর্ধ শতাধিক আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেককে রাতেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া থেকে ‘মোহাম্মদ’ বাসে রাজশাহী আসছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থী। কিন্তু বাসে সিটে বসাকে কেন্দ্র করে গাড়িচালক শরিফুল ও তার সহযোগী রিপনের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয় ওই শিক্ষার্থীর। পরে ওই শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর ফটকে আবারও তাদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়ান।
তখন ঘটনা মীমাংসার জন্য স্থানীয় এক দোকানদার আসেন। পরে ওই দোকানদারের সঙ্গে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের কথা-কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে জড়ো হয়ে স্থানীয় দোকানদারের ওপর চড়াও হন। পরে স্থানীয়রা একজোট হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও পাল্টা ধাওয়া করেন। ঘটনার সময় দায়িত্ব পালনকালে বাংলাদেশ প্রতিদিনের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিসহ কয়েকজন সাংবাদিক স্থানীয়দের হামলায় আহত হন।
সরেজমিন দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর ফটকের সামনে ঢাকা-রাজশাহী সড়কে অবস্থান নিয়েছে স্থানীয়রা। অন্যদিকে ক্যাম্পাসের ভেতরে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের সামনে অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। উভয় গ্রুপের হাতেই লাঠিসোঁটা, ইট। স্থানীয়রা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে ক্যাম্পাসের ভেতরে ঢিল ছুড়ছে। এছাড়া তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের ভেতরে বিনোদপুর গেটের পাশের পুলিশ ফাঁড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে।
রাত সোয়া ৮টার দিকে রাজশাহী সিটি মেয়র ঘটনাস্থলে যান। এরপর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়। তারপর থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে রাবি শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা চলছে। তিনি বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন।
রাজশাহীর মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে পুলিশ ঘটনাস্থলে আছে। তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে।