নিজের পাঁচ সন্তানকে গলাকেটে হত্যা করার পর আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছিলেন জেনেভিভ লেরমিট। তবে নিজের জীবন শেষ করতে পারেননি বেলজিয়ামের এই নারী।
জরুরি পরিষেবা নম্বরে ফোন করে সে যাত্রায় বেঁচে যায় তার প্রাণ।
তবে নিজের পাঁচ সন্তানকে খুনের দায়ে জেলে যেতে হয় লেরমিটকে।
যাবজ্জীবন সাজা হয় তার।
২০০৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারির সেই বিভীষিকাময় ঘটনার ঠিক ১৬ বছর পর বেলজিয়ামের আইন মেনে স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ করলেন জেনেভিভ।
শুক্রবার (৩ মার্চ) বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়।
বেলজিয়ামের আইন অনুযায়ী, দেশটির কোনো নাগরিক যদি শারীরিক বা মানসিকভাবে নিজের ব্যথা-কষ্ট সহ্য করতে না পারেন, সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমতি দেওয়া হতে পারে।
সেই আইনেই ৫৬ বছরের জেনেভিভ লেরমিটকে স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমতি দেয় বেলজিয়াম সরকার।
বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি স্বামীর অনুপস্থিতিতে নিজের একমাত্র ছেলে ও চার কন্যা সন্তানের গলা কেটে খুন করেন জেনেভিভ। রান্নাঘরের ছুরি দিয়েই এই কাণ্ড ঘটান তিনি। এরপর সেই ছুরি দিয়েই নিজেকেও শেষ করার চেষ্টা করেন ওই নারী। তবে সে যাত্রায় বেঁচে যান তিনি।
বেলজিয়ামের নিভেলস শহরের এই ঘটনায় ২০০৮ সালে নিজের পাঁচ সন্তানকে খুন করার দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয় জেনেভিভের। ২০১৯ সালে জেনেভিভকে কারাগার থেকে একটি মানসিক হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। তিন বছর ধরে সেখানেই ছিলেন ৫৬ বছর বয়সি জেনেভিভ। এরপর সম্প্রতি স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন করেন তিনি।
নিজের মৃত সন্তানদের প্রতি ‘সম্মান’ জানাতেই হত্যার ১৬তম বর্ষপূর্তিতে স্বেচ্ছামৃত্যুর আবদেন জানান জেনেভিভ। সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে তার স্বেচ্ছামৃত্যুর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।
তার আগে অবশ্য জেনেভিভের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে বিভিন্ন চিকিৎসকের মতামত নেওয়া হয়।
তার বিষয়ে মনস্তত্ববিদ এমিলি ম্যারিয়ট বলেন, নিজের সন্তানদের হত্যা করে নিজেরও প্রাণ কেড়ে নিতে চেয়েছিলেন জেনেভিভ। তিনি আসলে যে জিনিসটা শুরু করেছিলেন, সেটাই শেষ করতে চেয়েছিলেন।
এর আগে ২০০৮ সালে আদালতে এই মামলার শুনানির সময় জেনেভিভের আইনজীবী আবেদন করেন, যাতে তার মক্কেলকে কারাদণ্ডের আদেশ না দেওয়া হয়। জেনেভিভের আইনজীবীর যুক্তি ছিল, তার মক্কেল মানসিক ভারসাম্যহীন। তিনি নিয়মিত মনোবিদের কাছে যাচ্ছেন।
তবে মামলার শুনানি শেষে জুরি বোর্ড জেনেভিভকে দোষী সাব্যস্ত করে এবং তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়।