আদালতের বারান্দায় না ঘুরেও সেবা পাচ্ছেন প্রান্তিক বিচারপ্রার্থীরা

ডেস্ক :


ঢাকার ধামরাইয়ের বাসিন্দা আজিজুল হক। কাজ করেন একটি বেসরকারি ফার্মে। তাদের বেশ কিছু পৈতৃক সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ দেখা দিয়েছে প্রতিপক্ষের সঙ্গে। এর জেরে প্রতিপক্ষ একটি মামলাও করেছে। মামলার নথি তুলতে নির্ধারিত ফি লাগে তিনশো টাকা।

কিন্তু আজিজুল হকের কাছ থেকে আদালতের সংশ্লিষ্ট কর্মচারী নিয়েছেন আড়াই হাজার টাকা। অতিরিক্ত টাকা গেলেও নথি হাতে পেয়ে খুশি আজিজুল। কারণ, এরই মধ্যে এ কাজে তাকে একে একে তিনদিন আদালত এলাকায় ঘুরতে হয়েছে। নথি পাওয়ায় এখন আর আদালতে এসে ঘুরতে হবে না তাকে।

শুধু আজিজুল হক নন, ঠিক এভাবেই বিভিন্ন মামলার বাদী-বিবাদীদের দিনের পর দিন ঘুরতে হয় আদালতের বারান্দায়। মাস, বছর এমনকি যুগ পেরোলেও অনেকে পান না কাঙ্ক্ষিত নথির ক‚ল-কিনারা। অথচ তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অনলাইনে বাদী বা বিবাদীপক্ষ চাইলে এখন ঘরে বসেই পেতে পারেন সংশ্লিষ্ট মামলা সংক্রান্ত সব তথ্য।

এজন্য আদালতের বারান্দায় ঘোরা বা অতিরিক্ত টাকা খরচেরও প্রয়োজন নেই। তবে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এই ডিজিটাল সেবার আওতায় কতটা আসতে পেরেছে তা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। তবে এখন সুযোগ আছে দেশ-বিদেশের যে কোনো স্থানে বসে বিচারিক আদালতের রায় বা আদেশের অনুলিপি সংগ্রহের।

বরিশালের ছেলে ইকবাল কবীর। ছোটবেলায় বাবাকে হারান। তবে অভাবের সংসারেও চালিয়ে যান নিজের পড়ালেখা। তিনি এখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। থাকেন ক্যাম্পাসের একটি হলে। গ্রামের বাড়ি থাকেন মা আর ছোট বোন। টিউশনির টাকায় নিজের ও মা-বোনের খরচ জোগাতে হয় তাকে।

ইকবাল হঠাৎ জানতে পারেন, দূরসম্পর্কীয় চাচাতো ভাইয়েরা তাদের সব সম্পত্তি দখলে নিয়েছেন। প্রমাণস্বরপ দখলকারীরা দেওয়ানি আদালতের একতরফা ডিক্রির একটি কপি দেখান। ইকবালের মাথায় বাজ পড়ে। আদালতের মারপ্যাঁচ কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলেন না তিনি।

চোখে ঘোর অন্ধকার দেখা ইকবালের তখন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার ভূমিহীন উপেনের কথা মনে আসে। সেই কবিতার দুটি লাইন তিনি মনে মনে উচ্চারণ করতে থাকেন- ‘ভূধরে সাগরে বিজনে নগরে যখন যেখানে ভ্রমি/ তবু নিশিদিনে ভুলিতে পারিনে সেই দুই বিঘা জমি।’

এর মধ্যে এক আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করলে তিনি ইকবালকে জানান, রায়-আদেশ না পড়ে কিছুই বলা যাবে না। আগে নথিপত্র (নকল) তুলতে হবে। তারপর বোঝা যাবে কী করতে হবে! ওই রায়-ডিক্রির গতি-প্রকৃতি ও পরিণতি বুঝতেই ইকবালের চলে গেছে কয়েক হাজার টাকা। সেই টাকার পেছনে রয়েছে হাজারও দুঃখগাঁথা।

ইকবাল মনে মনে ভাবেন, আধুনিক প্রযুক্তির এ যুগে মানুষ স্মার্টফোনেই যেমন অনেক কিছু সহজে পেয়ে যাচ্ছে, সে-ও যদি তার স্মার্টফোনে সার্চ করেই মামলার রায়ের কপি ও প্রয়োজনীয় তথ্য খুঁজে পেতেন, কতোই না ভালো হতো। ডিজিটাল দুনিয়ায় এটুকু প্রত্যাশা যে তার মোটেই অমূলক নয়।

ইকবালের সেই প্রত্যাশা পূরণের পথ এরই মধ্যে তৈরি করেছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। দেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর দায়িত্ব গ্রহণের পর সুপ্রিম কোর্ট দেশের অধস্তন আদালতের সব রায় ও আদেশের অনুলিপি অনলাইনে প্রকাশ করা সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় এরই মধ্যে তেরশোর বেশি মামলার রায় ও আদেশ অনলাইনে প্রকাশ করা হয়েছে।

আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিচারক কাজে সংকট, মামলার আধিক্য, মামলার প্রতিবেদন দেরিতে আসা, অভিযোগপত্রে নারাজি, আসামিপক্ষের বারবার সময় আবেদন, উচ্চ আদালতে মামলা স্থগিত রাখা, সময়মতো সাক্ষীদের হাজির করতে না পারা, মামলা নিষ্পত্তিতে আইনজীবীদের গাফিলতিসহ বিভিন্ন কারণে বহু মামলা বছরের পর বছর আদালতে ঝুলে আছে।

এতে বাদী-বিবাদীরা আর্থিকভাবে যতটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আদালতে ঘুরে ততটাই হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে তাদের। এ অবস্থার নিরসনেই উদ্যোগ নেন প্রধান বিচারপতি।

সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ২০২২ সালের ১৭ নভেম্বর ‘নির্দেশনা’ আলোকপাত করলে থেকে দেখা যায়, প্রধান বিচারপতির অনুমোদনক্রমে বিচারিক সেবাদানের মাধ্যমসমূহ সহজতর, দ্রুততম ও সাশ্রয়ী করার লক্ষ্যে অবাধ বিচারিক তথ্যপ্রবাহ ও বিচারপ্রাপ্তিতে সহজ অভিগম্যতা নিশ্চিতকরণের অভিপ্রায়ে একটি ওয়েবসাইট প্রস্তুত করা হয়েছে।

দেশের সব অধস্তন আদালতের রায় ও আদেশের অনুলিপি কতিপয় নির্দেশনা ও ব্যবহারবিধি অনুসরণপূর্বক ওয়েবসাইটে প্রকাশ করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বিচারিক আদালতের আদেশ ও রায় ওয়েবসাইটে প্রকাশ করার জন্যও প্রধান বিচারপতির পরামর্শে গত বছরের ২০ নভেম্বর আরও একটি নির্দেশনা জারি করা হয়। নির্দেশনা দেওয়ার পর থেকে এরই আলোকে ‘অধস্তন আদালতের রায় ও আদেশ’ নামে একটি ওয়েবসাইট প্রস্তুত রয়েছে। যেখানে ২০ নভেম্বরের পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় এক হাজার ৩০০ এর বেশি রায় ও আদেশের কপি প্রকাশ করা হয়েছে।

ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, নিম্ন আদালতের আদেশ ও রায় অনলাইনে প্রকাশ করা হলে বিচারকার্যে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা এবং আদালত কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা ও গ্রহণযোগ্যতা ক্রমান্বয়ে বাড়বে। এছাড়াও মানসম্মত ন্যায়বিচার, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও টেকসই উন্নয়নে তা বিশেষ ভূমিকা রাখবে। বিশেষত, বিচারিক সেবাপ্রাপ্তিতে ব্যয়বহুলতা ও দুর্ভোগ লাঘব করে দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে মানুষের দোরগোড়ায়ও বিচারের বাণী দ্রুত পৌঁছে দিতে সক্ষম হবে।

বর্ণিত ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলে দেখা যায়, অধস্তন আদালতের গুরুতর ও গুরুত্বপূর্ণ ফৌজদারি মামলা, যেমন- হত্যা, ধর্ষণ, সাইবার অপরাধসহ জমিজমা ও পারিবারিক বিরোধ-সংক্রান্ত নানাবিধ দেওয়ানিমূল ও আপিল মামলার রায়ের অসংখ্য কপি আপলোড করা হচ্ছে। যে কেউ তা অনলাইনে নিজের সুবিধামতো দেখতে পাচ্ছেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, এটি অধস্তন আদালতের জনপন্থি ও জনবান্ধব পদক্ষেপ।

২০২২ সালের ২৭ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী উচ্চ আদালতের আটজন বিচারকের নেতৃত্বে দেশের আট বিভাগের অধস্তন আদালতের কার্যক্রম মনিটরিংয়ে আটটি আলাদা কমিটি গঠন করেন। কমিটিগুলো গঠনের পর দেশের অধস্তন আদালতগুলোতে মামলা নিষ্পত্তিতে এ গতি ফিরেছে। এরপর পর্যায়ক্রমে বেশ কয়েকটি ওয়েবসাইট তৈরি করেন সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন এবং আদেশ ও রায়ের কপি প্রকাশ করার নির্দেশনাও জারি করেন।

এরই সুফল মিলছে বলে আশা সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের।
সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিশেষ কর্মকর্তা (স্পেশাল অফিসার) অতিরিক্ত জেলা জজ মো. মোয়াজ্জেম হোছেইন জাগো নিউজকে বলেন, আদালতের বিভিন্ন আদেশ ও রায় পাওয়া ছিল খুবই ডিফিকাল্ট। বহু মানুষ আছে আদেশ অথবা রায়ের কপি গ্রহণ করার জন্য নির্দিষ্ট স্থান পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেন না। আমাদের মতো লোক হয়তো পৌঁছাতে পারবো, কিন্তু প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা একজন প্রান্তিক মানুষ কী করে নির্দিষ্ট জায়গায় যেতে হয় তা হয়তো জানেন না।

যে কারণে তাদের হরহামেশা হয়রানির শিকারও হতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, এখন গ্রামের যে ছেলেটা লেখাপড়া জানে না সে-ও ইন্টারনেট চালাতে পারে। সে এখন হয়তো একটা পত্রিকা খুঁজে বের করতে পারে, ইউটিউব থেকে বিভিন্ন তথ্য খুঁজে বের করতে পারে। সেই ছেলেটাই মোবাইলে জাজমেন্ট বের করে দিচ্ছে। যার প্রয়োজন তাকে হয়তো অনলাইনে এগুলো দেখিয়ে দিচ্ছে।

এটা একটা অ্যাডভান্টেজ। একই সময়ে প্রধান বিচারপতির পরামর্শে এসব হচ্ছে। একদিনে তো সবকিছুর পরিবর্তন সম্ভব নয়। ধীরে ধীরে হবে। পজিটিভলি এগিয়ে যাচ্ছে সব।
তিনি বলেন, দেশের আট বিভাগের বিচার ও মামলা মনিটরিং কমিটির পাশাপাশি যে ছয়টি আদালত প্রযুক্তি উদ্ভাবন হয়েছে এর মধ্যে মনিটরিং কমিটির অনলাইন রিপোর্টিং টুলসের মাধ্যমে আমরা পেপার ফি ডেটাগুলো পাচ্ছি।

আগে ফাইলের পেপার থাকতো স্তূপাকৃতির এবং সেগুলোর বিন্যাস বিশ্লেষণ করা সম্ভব হতো না। এখন এই টুলস থাকায় আমরা অনলাইনে তথ্যগুলো পাচ্ছি। আর তা দ্রæততার সঙ্গেও পেয়ে যাচ্ছি। টুলসের কারণে বিভিন্ন পর্যালোচনা ও অ্যানালাইসিস অনেক বেশি সহজ হয়েছে।

মোয়াজ্জেম হোছেইন আরও বলেন, প্রথম মাসে ডাটা এন্ট্রি দিতে গিয়ে হয়তো কোর্ট সংশ্লিষ্টদের একটু কষ্ট হয়েছে, কিন্তু পরের মাসগুলোতে তথ্য অটোমেটিক চলে আসছে। মনিটরিং কমিটির টুলসের যে তথ্য বা ফর্মগুলা কমিটি করেছে সেই তথ্য প্রদানের সাফল্য বা ফর্মের বাস্তবায়ন অনেকাংশে বেড়ে গেছে।

তিনি বলেন, অধস্তন আদালতের রায় ও আদেশ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে প্রকাশের ফলে দুটি বিষয় নিশ্চিত হয়েছে। এর একটি হলো মানুষের আইনের অভিগম্যতা। যাকে আমরা বলি, ‘এক্সেস টু জাস্টিস। দ্বিতীয়, বিচার ব্যবস্থায় মানুষের অনুপ্রবেশ এখন আরও কার্যকর উপায়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি। এখন অধস্তন আদালতের কোনো আদেশ বা রায় বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে বসে দেখতে পারবেন।

আগে কোনো একটা রায় হওয়ার পর অনেক প্রসেস মেইনটেন করে পেতে যে সময় লাগতো এখন কিন্তু লাগছে না। এখন দ্রæতই রায়ের বিস্তারিত জানতে পারছেন বিচারপ্রার্থীরা। সোজা কথায় ‘এক্সেস টু জাস্টিস’ নিশ্চিত হয়েছে।

হাইকোর্ট বিভাগের এই বিশেষ কর্মকর্তা আরও বলেন, আদালতের বার্তা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়াই ছিল প্রধান বিচারপতির উদ্দেশ্য। টুলস উদ্বোধনের ফলে সেটা অনেকাংশে বেড়ে গেছে। এরই মধ্যে হাজারখানেকের বেশি মামলার রায় ও আদেশ ডিজিটালি প্রকাশ হয়েছে। এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে একসময় সর্বোচ্চ সংখ্যক মামলার রায় ও আদেশ আমরা অনলাইনে পাবো। এতে বিচারপ্রার্থীরাও উপকৃত হবেন।

২০২২ সালের ২০ নভেম্বর নিম্ন আদালতের রায় ও আদেশের অনুলিপি অনলাইনে প্রকাশের নির্দেশনা জারি করা হয়। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নির্দেশনার আলোকে এ নির্দেশনা জারি করে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। এতে দেশের সব আদালতের রায় ও আদেশের অনুলিপি ওয়েবসাইটে প্রকাশের জন্য নির্ধারিত নির্দেশনা ও ব্যবহারবিধি অনুসরণ করতে বলা হয়।

এতে উল্লিখিত ওয়েবসাইটে আদালতের আদেশ ও রায় প্রকাশের ক্ষেত্রে মামলার সব পক্ষ অথবা মামলার কোনো ভিকটিম/ভুক্তভোগীর (নারী, শিশু বা অপরাধের শিকার ব্যক্তির) ব্যক্তিগত সুরক্ষা ও গোপনীয়তা রক্ষার্থে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী সতর্কতা অবলম্বন করতেও বলা হয়।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট এসএম মনিরুজ্জামান মনির জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমান সরকারের উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন খাত ডিজিটালাইজড হওয়ায় এর সুফলও মিলছে। যার প্রভাব পড়েছে বিচার বিভাগের ওপরও। দেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে শুরু করে নিম্ন আদালত পর্যন্ত ডিজিটাল পদ্ধতির নানা অগ্রগতি লক্ষণীয়। এতে কাগজের চাপ যেমন কমলো, সরকারের খরচও বাঁচলো।

তিনি বলেন, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে একজন বিচারপ্রার্থীকে মামলার জাজমেন্ট বা অর্ডারের বিষয়ে জানতে টাকা খরচ করে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত আসতে হতো। সংশ্লিষ্ট বিচারিক আদালতে গিয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য ঘুরতে হতো। অনলাইনে রায় ও আদেশ প্রকাশ করায় প্রান্তিক মানুষের এখন আর সেই দৌড় নেই। তারা এ ভোগান্তি ও হয়রানি থেকে রেহাই পেয়েছেন। এখন ঘরে বসেই রায় বা আদেশের কপি পাওয়া যাচ্ছে। বিচারাঙ্গনে অনলাইনের প্রভাব ব্যাপক না হলেও খুব ভালো প্রভাব বিস্তার করছে।

অনলাইনে আদেশ ও রায় প্রকাশের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট থেকে জারি করা ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে অনুসরণীয় নির্দেশনা’ অনুসরণ করতে হবে। তবে ওয়েবসাইটে প্রকাশিত অধস্তন আদালতের রায় বা আদেশের অনুলিপি জাবেদা নকলের (সার্টিফাইড কপি) বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। এর আগে দ্রুত সময়ে ও কম খরচে মানুষকে বিচারিক সেবা দিতে একটি ওয়েবসাইট প্রস্তুত করা হয়।

এখন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কোনো বিচারপ্রার্থীও অতিরিক্ত টাকা খরচ এবং আদালতের বারান্দায় সময় নষ্ট না করে নিম্ন আদালতের আদেশ ও রায় হাতে পাচ্ছেন। ঘরে বসে মামলা সম্পর্কিত সব তথ্য পাওয়ায় তার কষ্ট ও হয়রানি লাঘব হয়েছে।

মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ জাগো নিউজকে বলেন, এই ডিজিটালাইজেশনের কারণে আমরা অনেক বেনিফিট পাচ্ছি।

এখন আমি অন্য স্থানে বসেও অ্যাপিলেট ডিভিশনে আমার মামলার আইটেমটি ধরবে কি না, তা দেখতে পারছি। আগে কিন্তু হেঁটে গিয়ে দেখে আসতে হতো অথবা কাউকে পাঠাতে হতো। এই ডিজিটালাইজেশন দেশের বিচারাঙ্গনের একটি বিরাট অর্জন। এতে লাখ লাখ মানুষ উপকৃত হচ্ছেন।

তিনি বলেন, অনেকেই জানেন কোর্টের রায় ইংরেজিতে হয়, সাধারণ মানুষের তা বুঝতে একটু সমস্যা। আইনজীবীর ওপর নির্ভর করতে হয়। অনেক সময় পুরো তথ্য সঠিকভাবে জানা যায় না। অনেক ক্ষেত্রে টাকা ও সময় খরচ করতে হয়। অনলাইনে রায় বা আদেশ প্রকাশের ফলে মানুষের ভোগান্তি অনেক কমেছে।

মনজিল মোরসেদ বলেন, তবে একটা প্রশ্ন আছে- কতজন এই অনলাইনে আদালতের রায় বা আদেশ জানার কায়দা বোঝেন। অধিকাংশ মানুষের তা নেই। কিছু মানুষ সেটা পারে। সেক্ষেত্রে বেনিফিটটা সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। ভবিষ্যতে হয়তো এ বিষয়টির আরও অগ্রগতি হবে।

এর আগে ২০২২ সালের ১৫ নভেম্বর জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এখন থেকে বিচারিক আদালতের রায় ও আদেশ পাওয়া যাবে অনলাইনে। এছাড়া সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায় ও আদেশের অনুলিপি সহজ প্রক্রিয়ায় প্রস্তুত হবে। ফলে বিচারপ্রার্থী সহজেই মামলার নকল ও সার্টিফাইড কপি সংগ্রহ করতে পারবেন।

গত বছরের ১৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট অডিটোরিয়ামে সুপ্রিম কোর্ট উদ্ভাবিত ছয়টি কোর্ট প্রযুক্তির উদ্বোধন করেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। এগুলো হচ্ছে ‘সুপ্রিম কোর্ট মোবাইল অ্যাপ’, ‘মনিটরিং কমিটির অনলাইন রিপোর্টিং টুলস’, ‘আপিল বিভাগের ডিজিটাল অনুলিপি শাখা’, ‘আপিল বিভাগের প্রবেশ পাস’, ‘অনলাইনে অধস্তন আদালতের রায় ও আদেশ প্রকাশ’ এবং ‘শিশু আদালতের রিপোর্ট এন্ট্রি প্ল্যাটফর্ম’।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি বলেন, লক্ষ্য একটাই- স্বল্প সময়ে ও কম খরচে বিচারপ্রার্থীর ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। আগামী দিনের বিচারব্যবস্থায় তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ ব্যবহার নিশ্চিত করতে সুপ্রিম কোর্ট প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

বিচারব্যবস্থাকে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আমাদের সবাইকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। একটি যুগোপযোগী ও গতিশীল বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় আমাদের এখনই সংকল্পবদ্ধ হতে হবে।- জাগোনিউজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *