বাগমারা
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় চলতি মৌসুমে কন্দ জাতের পেঁয়াজ ক্ষেত থেকে উত্তোলন শুরু করেছে কৃষকরা। হাটে হাটে বেড়েছে পেঁয়াজের সরবরাহ। দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে বাগমারার পেঁয়াজ। ক্রয় বিক্রয় করে কৃষকদের উৎপাদন খরচ উঠলেও তারা আশানুরুপ দাম পাচ্ছেনা বলে জানিয়েছেন।
জানা গেছে, জেলার পেঁয়াজ উৎপাদনকারী উপজেলা হিসেবে বাগমারা অন্যতম। এ উপজেলার তাহেরপুরী পেঁয়াজের সমাদর বেশ আগে থেকেই। চলতি মৌসূমে পেঁয়াজের ফলন ভাল হলেও তুলনামূলক ভাল দাম পাচ্ছেনা কৃষকরা। উৎপাদন খরচের চেয়ে বাজার দর ভাল না পাওয়ায় আর্থিক ভাবে কম লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।
এদিকে ব্যাবসায়ীরাও উপজেলার তাহেরপুর, আলোকনগর, ভবানীগঞ্জ, শীকদারীসহ বিভিন্ন হাট থেকে পেঁয়াজ ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করছেন বলে জানা গেছে। তবে বেশী লাভবান হতে না পারলেও ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য পেঁয়াজ ক্রয় করছেন ব্যবসায়ীরা। তারা জানান, পেঁয়াজ ক্রয় করে তা প্যাকেটিং করার জন্য বস্তার দাম, লেবার খরচ, আড়তদারী খরচ, পরিবহন খরচসহ যে পরিমাণ টাকা গুনতে হয় সে অনুযায়ী লাভের মুখ দেখা যাচ্ছে না।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ মৌসূমে বাগমারার ১৬টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভায় এক হাজার দুইশ পনের হেক্টর জমিতে কন্দ জাতের পেয়াজের চাষাবাদ করা হয়েছে।
আলোকনগর গ্রামের কৃষক আব্দুল মান্নান, আবুল হোসেন, আব্দুল হাকিমসহ আরো কয়েকজন জানান, পেঁয়াজ চাষে যে পরিমাণ টাকা খরচ হয়েছে বর্তমানে বিক্রির পর খুব একটা লাভ হচ্ছেনা। সেচ খরচ, সার ও শ্রমিকের খরচ বেড়ে যাওয়ায় লাভ কম হচ্ছে বলে মাড়িয়ার কৃষক মোজাম্মেল হক জানিয়েছেন।
রোববার উপজেলার আলোকনগর হাট ঘুরে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এমন কথা জানা গেছে। হাটে আসা তাহেরপুরের ব্যবসায়ী ও আড়তদার আব্দুল মান্নান, সাইদ, মাহাবুর, মোজাম্মেলসহ বেশ কয়েকজন জানান, আলোকনগর হাট থেকে পেঁয়াজ ক্রয় করে ট্রাকযোগে রাজধানী ঢাকার কাওরান বাজার, যাত্রাবাড়ী, রায়ের বাজার, গাবতলীসহ বিভিন্ন আড়ত, নারায়নগঞ্জ, ময়মনসিংহ, সিলেট, রংপুর, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, সৈয়দপুর, ফুলবাড়িসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পেঁয়াজ সরবরাহ করা হচ্ছে।
বাগমারার বিভিন্ন হাট-বাজারে বর্তমানে সাড়ে সাতশ থেকে নয়শ টাকা মণ দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গেছে। কৃষকরা জানান, প্রতি বিঘা জমিতে বীজ, শ্রমিক, ওষুধ ও সার খরচ বাবদ যে পরিমান টাকা খরচ হয়েছে, ক্ষেতে উৎপাদন ভাল হলেও বাজার দর কম হওয়ায় অধিক লাভ পাচ্ছেনা চাষীরা।
তাহেরপুরের কাঁচামাল ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম জানান, ব্যবসা চলমান রাখার জন্য পেয়াজ কিনে কম লাভেই পাঠানো হচ্ছে। প্রতি সপ্তাহেই তিনি ট্রাকযোগে ময়মনসিংহে পেঁয়াজ সরবরাহ করছেন বলে জানিয়েছেন। এছাড়াও ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নান উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলাসহ রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন আড়তে, ব্যবসায়ী রফিক নারায়নগঞ্জ পেঁয়াজ সরবরাহ করছেন বলে জানিয়েছেন।
যোগাযোগ করা হলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুর রাজ্জাক জানান, বাগমারা অঞ্চলে এবার পেঁয়াজের উৎপাদন ভাল হয়েছে। উৎপাদন বেশী হবার জন্য বাজার দর হয়তো ওঠানামা করতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।