জনশুমারির চূড়ান্ত প্রতিবেদন এখনও না পাওয়ায় গত সংসদ নির্বাচনের আসন সীমানা ঠিক রেখেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৩০০ আসনের সীমানার খসড়া প্রকাশ করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন।
মঙ্গলবার নির্বাচন ভবনে কমিশন সভার পর ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, “গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় সীমানা যা ছিল, তা নিয়ে খসড়া প্রকাশ করা হবে জলতি মাসে। বিজ্ঞপ্তিতে দাবি আপত্তির জন্য একটা সময় নির্ধারণ করা হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যেসব দাবি আপত্তি আসবে, সেগুলো বিবেচনায় নেওয়া হবে।”
ইতোমধ্যে অনেকেই নিজ উদ্যোগে দাবি-আপত্তির আবেদন দিয়েছেন জানিয়ে ইসি সচিব বলেন, “প্রায় ২০ থেকে ২৫টি আবেদন এসেছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যে সমস্ত আবেদন পড়বে, সেগুলো নিয়ে শুনানি করে বিধি বিধানের আলোকে চূড়ান্ত আসন সীমানা ঘোষণা করা হবে।”
আগামী নির্বাচনের আগে সংসদীয় আসন সীমানায় কোনো পরিবর্তন আসবে কিনা জানতে চাইলে জাহাংগীর আলম বলেন, “বিষয়টি প্রাপ্ত আবেদনের সংখ্যার ওপর নির্ভর করবে আমরা আগে খসড়া প্রকাশ করব। এরপরে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যে আবেদনগুলো আসবে, সেই আপত্তি এবং ইতোমধ্যে নিজ থেকে যে আবেদনগুলো পড়েছে, সেগুলো শুনানি করে আমরা বলতে পারব, আসলে কয়টায় কী হয়েছে।”
আরেক প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, “পূর্ববর্তী সময়ে যেভাবে সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে, দ্বাদশ নির্বাচনে সেই পদ্ধতি অনুসরণ করে, অর্থাৎ এখন যেটা আছে, সেটা দিয়েই আমরা খসড়া প্রকাশ করব। এরপর কারো যদি কোনো আপত্তি থাকে, সব আবেদনের শুনানি হবে। এরপর চূড়ান্ত হবে কয়টা আসনের সীমানা পরিবর্তন হচ্ছে।”
খসড়া কবে নাগাদ প্রকাশ করা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ” দ্রুতই প্রকাশ করা হবে। এটা আমরা আগামী সপ্তাহের মধ্যেই করে দেব। বাস্তবতা এবং আইনের বিষয়টাও তাই। আগে তো মানুষকে জানাতে হবে। তারপর তাদের কোনো আপত্তি থাকলে তার ওপর শুনানি হবে।”
জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ আইন অনুযায়ী, প্রতি জনশুমারির পর সংসদ নির্বাচনে সীমানা নির্ধারণ করার বাধ্যবাধকতা আছে।
এ বছর ৩১ অক্টোবর থেকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ক্ষণ গণনা শুরু হবে। ২৯ জানুয়ারির মধ্যে হবে সংসদ নির্বাচন। এর ছয় মাস আগেই ৩০০ আসনের সীমানা পুননির্ধারণ করার পরিকল্পনা ইসির। নির্বাচন কমিশনের রোডম্যাপ অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে এ কাজ শেষ করার কথা।
গত বছর ২৭ জুলাই বাংলাদেশ পরিসংখ্যান
ব্যুরোর (বিবিএস) ষষ্ঠ জনশুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। তাতে দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার বলে জানানো হয়।
বিবিএস এর ওই প্রতিবেদনের তথ্য যাচাই-বাছাই করে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএস তাদের প্রতিবেদন দিয়েছেন সোমবার। সেখানে বলা হয়েছে, প্রাথমিক প্রতিবেদন যাচাইয়ে ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ তথ্যে অমিল পাওয়া গেছে। এই ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ যোগ হলে চূড়ান্ত জনসংখ্যা দাঁড়াবে ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন।
বিআইডিএস তাদের পর্যালোচনা জমা দিলেও বিবিএস এখনও জনশুমারির চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর গত রোববার বলেছিলেন, সংসদীয় এলাকার সীমানা পুনর্র্নিধারণের জন্য জনশুমারির চূড়ান্ত প্রতিবেদনের অপেক্ষা করে থাকা নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জন্য কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
সীমানা পুননির্ধারণ আইন অনুযায়ী, ভৌগোলিক অখণ্ডতা বজায় রেখে সর্বশেষ আদমশুমারি প্রতিবেদনের জনসংখ্যার যতদূর সম্ভব ‘বাস্তব বণ্টনের’ ভিত্তিতে সীমানা নির্ধারণ করতে হবে।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, “যে আইন আছে, প্রথম হচ্ছে ভৌগলিক অখণ্ডতা, তারপর আঞ্চলিক অবিভাজ্যতা, তারপর প্রশাসনিক এলাকা, চতুর্থত জনসংখ্যার ঘনত্ব। এ সবগুলোর বিবেচনায় নিয়ে যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে সীমানা সংশোধন হবে। না হলে হবে না।”
সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্র্নিধারণ নিয়ে মঙ্গলবারই প্রথম বৈঠক করল বর্তমান কমিশন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ অন্য কমিশনাররা এবং ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন বৈঠকে।
তথ্যসূত্র: বিডিনিউজ