রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইমা আরাবি ইভার মৃত্যু ‘হত্যা নাকি আত্মহত্যা’ প্রশ্ন তুলে মানববন্ধন করেছেন ওই বিভাগের শিক্ষক- শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১২টায় ক্যাম্পাসের প্যারিস রোডে এই কর্মসূচি পালিত হয়।
সাইমা আরাবি ইভা (২৪) রাজশাহীর কর্ণহার থানার দেবেরপাড়া গ্রামের মো. হারুন অর রশিদ ও তাসলীমা রশীদের কন্যা। মানববন্ধনে সাইমা আরাবি ইভার মায়ের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৬-১৭ বিভাগের শিক্ষার্থী আসিম নাবিল।
মায়ের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, আমার কন্যা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগের অনার্স ও মাস্টার্স পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিপ্রাপ্ত মেধাবী ছাত্রী। ছোটবেলা থেকেই ইভা ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করার স্বপ্ন দেখত। তার অপ্রাপ্ত বয়সে নজর পড়ে একই গ্রামের বাসিন্দা অভিযুক্ত মো. নাজমুল মাহমুদ পলাশ (৩০) ও তার পরিবারের। কৌশলে আমার কন্যার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। এতে ইভার লেখাপড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে পলাশের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। কিন্তু পলাশ গভীর রাতে নেশা করে সঙ্গীদের নিয়ে আমাদের বাড়িতে আসত। এসে আমার মেয়েকে ও আমাদের বিয়ের জন্য হুমকি দিত। এজন্য আমার কন্যা তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল। কিন্তু পলাশ আমার মেয়ের বিয়ের ভালো সম্বন্ধ আসলে গোপনে তা ভেঙে দিত।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, মেয়ে ও অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে একা বাড়িতে থাকায় জীবনের নিরাপত্তা ও সম্মানহানির ভয়ে আমরা আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চাইনি। পরে গত ১৪ জানুয়ারি ভেটেরিনারি ডাক্তারের সঙ্গে ইভার বিয়ে হয়। এতে পলাশ আমার মেয়ের অতীতের কিছু ছবি এবং ভিডিও এডিট করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। পরে ১৫ জানুয়ারি পলাশ ও তার সঙ্গীরা রাস্তা হতে আমার মেয়েকে উঠিয়ে নিয়ে জোরপূর্বক বিয়ে করে। ফলে একপর্যায়ে ইভা গত ১৯ জানুয়ারি বিকেলে অতিরিক্ত পরিমাণে ড্রাগ (ওষুধ) সেবন করে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পরদিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। এ ঘটনায় পলাশসহ জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।
কর্মসূচিতে সাইমার বড় ভাই মাসুদ-আল-রশিদ উপস্থিত ছিলেন। চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক মো. শরিফুল ইসলামের সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে প্রায় দেড়শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। কর্মসূচিতে সংহতি জানায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ‘রাজশাহী মহিলা পরিষদ’ এবং ‘মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম’। মানববন্ধন থেকে তারা সাইমা আরাবির মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান।