গভীর সাগরে মাছ ধরার কাঠের তৈরি একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা থেকে ১০ জন জেলের গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। রবিবার (২৩ এপ্রিল) বিকালে কক্সবাজারের নাজিরারটেক সৈকত এলাকায় নৌকাটির বরফ রাখার হিমাগার ভেঙে এসব জেলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে দমকল বাহিনী ও পুলিশের উদ্ধার করা জেলেদের মরদেহগুলো পচে গেছে।
জানা গেছে, গভীর সাগরে একে একে মাছ ধরার নৌকায় দস্যুতা করার দায়ে সাগরের অন্যান্য জেলেরা ক্ষুব্ধ হয়ে নৌকাটির সকল দস্যুবেশী জেলেদের মেরে মরদেহগুলো নৌকার বরফ রাখার হিমাগারে আটকে রাখেন। এরপর নৌকাটিই ডুবিয়ে দেন। সেখানেই তাদের মৃত্যু হয়। কিন্তু সেই নৌকাটি ভেসে ওঠায় শেষ পর্যন্ত হতভাগা জেলেদের মরদেহগুলো আজ উদ্ধার করা হয়। ১৯৯৫ সালেও এরকম একটি ভয়াল ঘটনায় ১৪ জেলের লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো মাহফুজুল ইসলাম গণমাধ্যমকর্মীদের জানিয়েছেন, একটি ভাসমান মাছ ধরার নৌকা সোনাদিয়া দ্বীপের পশ্চিমে সাগরে দেখতে পেয়ে মাছ ধরারত অন্যান্য নৌকার জেলেরা কাছে গিয়ে উৎকট গন্ধ পান। জেলেরা নৌকায় পচা গন্ধ পেলে ভাসমান নৌকাটিকে অন্য দুটি নৌকার জেলেরা মিলে টেনে নিয়ে আসেন।
পুলিশ সুপার জানান, ভাসমান নৌকাটি আজ বিকালে বাঁকখালী নদীর মোহনায় নাজিরারটেক নামক এলাকায় নিয়ে আসা হয়। পরে পুলিশ ও দমকল বাহিনীর সদস্যরা নৌকাটির বরফ রাখার হিমাগারের পাটাতন ভেঙে একে একে ১০ জেলের গলিত মরদেহ উদ্ধার করেন।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকারিয়া জানিয়েছেন, কমপক্ষে ১০-১৫ দিন আগে এসব জেলেদের মৃত্যু ঘটেছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। একটি মরদেহও শনাক্তযোগ্য অবস্থায় নেই।
খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, গত ৭ এপ্রিল মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের ছনখোলা পাড়া গ্রামের মৃত রফিক আলমের পুত্র শামসুল আলম তার নিজস্ব মালিকানাধীন একটি ইঞ্জিনচালিত মাছ ধরার নৌকা নিয়ে মাছ ধরতে যান। পরে তিনিসহ কমপক্ষে ১৩-১৪ জন জেলে নিখোঁজ হন।
এ ঘটনার তিন দিন পর সাগর থেকে মাছ ধরে ফিরে আসা দ্বীপের কালারমারছড়া ইউনিয়নের আধাঁরঘোনা গ্রামের আবদুস সালামের পুত্র বাবু এলাকার লোকজনকে জানান, শামসুল আলম অন্য নৌকায় ডাকাতি করেছেন অভিযোগে গত ৯ এপ্রিল রবিবার সকাল ৭টার দিকে অন্যান্য নৌকার জেলেরা সম্মিলিতভাবে জেলেদের মেরে নৌকাটি ডুবিয়ে দেয়।
মহেশখালীর মাতারবাড়ি এলাকার জনৈক বাইট্টা কামাল ও একই এলাকার নুর হোসাইন বহদ্দারের মালিকানাধীন দুটি নৌকা এবং তাদের সাথে থাকা মাতারবাড়ির আবছার মাঝি এবং বাবুল মাঝির নৌকাসহ চার-পাঁচটি নৌকার জেলেরা মিলে ক্ষুব্ধ হয়ে শামসুলের নৌকাটিকে ধাওয়া দিয়ে আক্রমণ করে। এরপর জেলেরা শামসুলের নৌকার জেলেদের বিরুদ্ধে জলদস্যুতার অভিযোগ তুলে মারধরের পর সবাইকে নৌকার বরফ রাখার হিমাগারে ঢুকিয়ে পাটাতনে পেরেক মেরে পানিতে ডুবিয়ে দেন।
শামসুলের বিরুদ্ধে সাগরে দস্যুতার অভিযোগ অনেক পুরানো বলে স্থানীয় জেলেরা জানান। এদিকে, নৌকাসহ নিখোঁজ হোয়ানকের ছনখোলাপাড়া এলাকার শামসুল আলমের স্ত্রী রোকেয়া আক্তার সাংবাদিকদের জানান, আমার স্বামী প্রতিদিন সাগরে গিয়ে মাছ ধরে চলে আসে। গত ৭ জুলাই সাগরে যাওয়ার পর থেকে তার ফোন বন্ধ পাচ্ছি। আমি জানি না তিনি কোথায় রয়েছেন, কিভাবে আছেন। বিভিন্নজনের কাছ থেকে বিভিন্ন কথা শুনতে পাচ্ছি। আমরা প্রশাসনের কাছে তাদের খোঁজ পেতে সহযোগিতা চাই।
পুলিশ সুপার আরো জানান, মরদেহগুলোর ময়নাতদন্ত করার জন্য জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনার তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।