নিউজ ডেস্কঃ
সাম্প্রতিক সময়ে চোরাইপথে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের বেশকিছু চালান ধরা পড়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে। দেশি-বিদেশি এসব অস্ত্রগুলো মূলত মাদকব্যবসায়ীদের কাছ থেকেই উদ্ধার করা হয়েছে। আর এসব অস্ত্র চোরাচালানে অস্ত্র ব্যবসায়ীদের ‘কাট-আউট’ পদ্ধতির ভেলকিতে পড়েছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নির্বাচনী বছরে অস্ত্রের এই চালানে শুধু প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীই উদ্বিগ্ন নয়; রাজশাহীর সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ সাধারণ মানুষের মুখে মুখেও নানাভাবে আলোচিত-সমালোচিত হচ্ছে এই বিষয়টি।
আইনশৃঙখলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্র বলছে, অস্ত্র কারবারীরা আগের চেয়ে এখন অনেক সচেতন। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে নানা কৌশল অবলম্বন করছে তারা। এরমধ্যে একটি হলো ‘কাট-আউট’ পদ্ধতি।
সূত্র বলছে, উৎপাদক থেকে ব্যবহারকারী পর্যন্ত একটি অস্ত্র পৌঁছাতে কয়েকটি স্তর ও ব্রিজ তৈরি করা হয়। ‘কাট আউট’ পদ্ধতি হলো মূলত যোগাযোগ বিচ্ছিন্নকরণ পদ্ধতি। এই কারবারে সর্বনিম্ন তিনটি স্তর থাকে। সর্বোচ্চ বেশকিছু স্তর থাকতে পারে। উৎপাদন, বাহক ও বিক্রেতা। কাট আউট পদ্ধতির মাধ্যমে একে অন্যের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এখানে এতোটাই গোপনীতা অবলম্বন করা হয় যে একে অপরকে চেনে না। এখানে ব্যক্তি নিজে অস্ত্র কারবারের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও যেখান থেকে অস্ত্র আসলো বা যে নিয়ে আসলো, আবার যে বিক্রি করবে; এরা একে অপরকে চেনে না। আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অস্ত্র বিক্রেতা ও ব্যবহারকারী কখনো কখনো বাহক পর্যন্তই পৌঁছাতে পারছে। শেকড়ে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না কাট-আউট পদ্ধতির ভেলকিবাজির কারণে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, নির্বাচনী এই বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত শুধু র্যাব-৫ অভিযান চালিয়ে অন্তত ৫১টি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করেছে। যার মধ্যে ২০টি বিদেশি পিস্তল। আর রাজশাহী জেলা ও নগর পুলিশের অভিযানে অন্তত ১৮টি অস্ত্রসহ মোট ২৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর বাইরেও বিজিবির অভিযানে অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। তবে তারা এ সর্ম্পকিত তথ্য দেয় নি। এদিকে অস্ত্রসহ যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের অধিকাংশই চিহ্নিত মাদক চোরাকারবারি।
এমন পরিস্থিতিতে ‘কাট-আউট’ পদ্ধতির ভেলকি মাড়িয়ে মোট অস্ত্র চোরাকারবারের কত শতাংশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ছে- এটা বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তবে এর নির্দিষ্ট কোনো তথ্য বা সংখ্যাগত বিশ্লেষণ নেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে। তবে পুলিশ ও র্যাব বলছে, তারা বিষয়টিকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছেন। সুতরাং তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে অস্ত্র চোরাকারবারি কিংবা নির্বাচনী বছরে এই অস্ত্র ব্যবহার করে সহিংসা সৃষ্টির অপচেষ্টা সফল হবে না।
এ বিষয়ে রাজশাহী পুলিশ সুপার মো. সাইফুর রহমান বলেন, নির্বাচন আসলেই ক্ষুদে অস্ত্র চোরাচালান বৃদ্ধি পায়। এবারও হয়তো তেমনটা হতে পারে। তবে পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করছে। অভিযান চালিয়ে অস্ত্র উদ্ধার করা হচ্ছে। আর অস্ত্রের সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ীদের সম্পৃক্তার বিষয়টি উঠে আসছে। দেখা যাচ্ছে, অস্ত্র চোরাকারবারিরা মাদক চোরাকারবারির সঙ্গেও যুক্ত।
তিনি আরও বলেন, এখানে কাট-আউট পদ্ধতির ব্যবহার করা হচ্ছে। একারণে যাদেরকে গ্রেফতার করা হচ্ছে, তারা সর্বোচ্চ একজনের নাম বলতে পারছেন। একারণে শেকড় পর্যন্ত পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। তবে একটি বিষয় আশ^স্ত করতে চাই, অস্ত্রের মজুদ বাড়িয়ে আসন্ন নির্বাচনী পরিবেশ অস্থীতিশীল করার অপচেষ্টা সফল হতে দেয়া হবে না। এখানে বিন্দুমাত্র ছাড় হবে না।
এ বিষয়ে র্যাব-৫ এর লে.কর্নেল (অধিনায়ক) রিয়াজ শাহরিয়ার জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে অস্ত্র চোরাকারবারিরা। র্যাবও নানা কৌশল অবলম্বন করছে। গোয়েন্দা সংস্থাসহ পুলিশ-বিজিবি সবার সঙ্গে সমন্বয় করে গভীর পর্যবেক্ষণ করছে। আর দেশীয় অস্ত্রের ক্ষেত্রে র্যাব উৎপাদনকারী পর্যন্ত পৌঁছাতে পেরেছে। কিন্তু বিদেশি অস্ত্রের বেলায় সেটা সম্ভব হয় না। কারণ বর্ডার ক্রস করে অন্য দেশে কাজ করার এখতিয়ার র্যাবের নেই। তবে তাদের কাছে যে তথ্য-উপাত্ত থাকে, সেগুলো সদর দপ্তরে পাঠান।
তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত অস্ত্রসহ যাদের আটক করা হয়েছে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদে রাজনৈতিক পরিচয় বা রাজনৈতিক ইন্ধন এমন বিষয় উঠে আসে নি। যাদের আটক করা হয়েছে, তাদের অধিকাংশই মাদক ব্যবসায়ী। এখন তাদের হয়তো কেউ ব্যবহারও করতে পারে। বিষয়টিকে তারা পর্যবেক্ষণে রেখেছেন।
রাজশাহী বিজিবি-১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাব্বির আহমেদ বলেন, নির্বাচন আসলে অস্ত্রের চোরাচালান বাড়ে। তবে তারা বর্ডারে নজরদারি বাড়িয়েছেন। টহল বাড়িয়েছেন। সোর্স নিয়োগ করেছেন। আর চোরাকারবারিদের শেকড় পর্যন্ত পৌঁছানোর বিষয়গুলো র্যাব ও পুলিশ করে থাকে। তারা গ্রেফতারকৃত আসামিদের রিমান্ডে এনে সেই তথ্যে কাজ করেন।
এ বিষয়ে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে অবৈধ অস্ত্রের চোরাচালন বাড়তেও পারে। তবে তিনি সম্প্রতি যোগদানের পর একজনকেই অস্ত্রসহ গ্রেফতার করা হয়েছে। আর কাট-আউট পদ্ধতি অনেক পুরোনো পদ্ধতি। মাদক চোরাকারবারিরাও এই পদ্ধতি ব্যবহার করে। তবে পুলিশ এ বিষয়ে তৎপরতা বাড়িয়েছে।
সূত্রঃ দৈনিক সোনার দেশ