নিউজ ডেস্কঃ
প্রায় এক দশক আগে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় এক শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যার দায়ে দুই আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আপিল বিভাগ। বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া এ দুই আসামিকে হাইকোর্ট দুই বছর আগে খালাস দিয়েছিলেন। খালাসের সে রায় বাতিল করে আজ বুধবার রায় দেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ। এ রায়ে বিচারিক আদালতের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় পরিবর্তন করে দুই আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
দণ্ডিতরা হলেন মঠবাড়িয়া উপজেলার বুখইতলা গ্রামের মৃত জাহিদ হোসেনের ছেলে মেহেদী হাসান স্বপন ও মোস্তফা জমাদ্দারের ছেলে সুমন জমাদ্দার। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পি ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ সাইফুল আলম। আসামি পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী হেলাল উদ্দিন মোল্লা ও মোহাম্মদ শিশির মনির।
আইনজীবী হেলাল উদ্দিন মোল্লা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি দুই আসামিকে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।
এই জরিমানার টাকা না দিলে তাদের আরো ৬ মাসের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।’
মামলা নথি থেকে জানা যায়, শিশুটি নানাবাড়িতে থেকে পড়ালেখা করত। ২০১৪ সালের ৫ অক্টোবর সকালে স্কুলের মাঠে গরুকে ঘাস খাওয়ানোর জন্য যায়। দুপুরে ঘরে না ফেরায় স্বজনরা তাকে খুঁজতে শুরু করেন।
পরদিন দুপুরে বাড়ির পাশের একটি বাগানে শিশুটির ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ পাওয়া যায়।
খবর পেয়ে মঠবাড়িয়া থানা পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পিরোজপুর সদর হাসপাতালে পাঠায়। ময়নাদন্তের প্রতিবেদনে বলা হয়, শিশুটিকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।
এ ঘটনায় শিশুটির বাবা বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা করেন। তদন্ত শেষে মামলার তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা রথীন্দ্রনাথ বিশ্বাস এ ঘটনায় শিশুটির মামাতো ভাই মেহেদী হাসান স্বপনের সংশ্লিষ্টতা পান।
পরে স্বপন ও সহযোগী সুমন জমাদ্দারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পরে আসামি সুমন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। স্বীকারোক্তিতে সুমন বলে, শিশুটিকে বাগডাস দেখানোর লোভ দেখিয়ে বাগানে নিয়ে প্রথমে দুজন মিলে ধর্ষণ করে। বিষয়টি জানাজানি হতে পারে সে ভয়ে পরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে শিশুটিকে হত্যা করা হয়।
এ মামলায় তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি এ দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। অভিযোগপত্রে বলা হয়, শিশুটির বড় বোনকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন স্বপন। পরিবার এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল। পরে স্বপন অন্য একজনকে বিয়ে করলেও শিশুটির বোনের প্রতি তার আকর্ষণ থেকে যায়। এ নিয়ে প্রায়ই নিজেদের মধ্যে বিবাদ হতো। সে বিবাদের জেরেই শিশুটিকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়।
ওই বছরের ৭ এপ্রিল আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করে পিরোজপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১। বিচারের সময় আসামি সুমন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রত্যাহার করে নেয়। বিচার শেষে ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. গোলাম কিবরিয়া দুই আসামিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। পরে নিয়ম অনুযায়ী এই মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের আবেদন (ডেথ রেফারেন্স) হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে আপিল করে আসামিরা। শুনানির পর ২০২১ সালের ৩০ জুন ডেথ রেফারেন্স খারিজ ও আসামিদের আপিল মঞ্জুর করে খালাসের রায় দেন হাইকোর্ট। এ রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। সে আপিল মঞ্জুর করে রায় দিলেন দেশের শীর্ষ আদালত।