বাগমারা প্রতিনিধি
রাজশাহীর বাগমারায় নেশাগ্রস্থ স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। প্রতিনিয়ত নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধু আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। বর্তমানে সে বাগমারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে। স্বামীর নির্যাতনে অতিষ্ঠ গৃহবধু শুক্রবার (১৭ফেব্রুয়ারী) বিকেলে চার বছরের এক পুত্র সন্তানকে কোলে নিয়ে আহত অবস্থায় ছুটে আসেন বাগমারা প্রেসক্লাবে। এ সময় গৃহবধু তার উপর শারীরিক নির্যাতনের বর্ননা সহ কিছু আলামত তুলে ধরলে প্রেসক্লাবের সাংবাদিক সহ স্থানীয় লোকজন বিমর্ষ হয়ে পড়েন। পরে সে চিকিৎসার জন্য বাগমারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যায়।
জানা যায়, নরদাশ ইউনিয়নের জয়পুরা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত বিজিপি’র সদস্য আব্দুল হান্নান(৫২) বিগত সাত বছর পূর্বে চারঘাট উপজেলার ওমরগাড়ি গ্রামের আব্দুল খালেকের মেয়ে লতিফা বেগম (৪০) কে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসাবে বিয়ে করেন। পরে তাদের ঘরে একটি ছেলে সন্তান জন্মলাভ করে। গৃহবধু লতিফা বেগম ও তার প্রতিবেশিরা জানান, বিয়ের পর থেকেই প্রতিনিয়িত যৌতুকের জন্য নির্যাতন চালায় আব্দুল হান্নান। সে পূর্ব থেকেই নেশাগ্রস্থ। মদ, ইয়াবা ও গাঁজাসহ বিভিন্ন নেশাদ্রব্য সেবন করে বলে জানা যায়। ক্রমেই হান্নানের নেশার মাত্রা বাড়তে থাকে। যৌতুকের জন্য বেপরোয়া হয়ে ওঠে সে। স্বামীর নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়েও সংসার টেকানোর স্বার্থে গৃহবধু লতিফা বেগম তার বাবার বাড়ি থেকে কয়েক দফা যৌতুন এনে দিলেও নির্যাতন বন্ধ করেনি তার স্বামী। এদিকে এই বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় গ্রাম্য মাতব্বরা একাধিক বার নিস্পত্তির চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। এছাড়া বিষয়টি নিয়ে নরদাশ ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগের সাধারন সম্পাদক অধ্যক্ষ গোলাম সারোয়ার আবুলের শরনাপন্ন হন গৃহবধু লতিফা বেগম। আবুল বিষয়টি নিয়ে নিস্পত্তির চেষ্টা করলেও হান্নানের একঘেয়েমীর কারণে তা ভেস্তে যায়। পরে গৃহবধু তার নেশাগ্রস্থ যৌতুকলোভী স্বামীর অত্যাচার নির্যাতনের বিষয়টি নিয়ে বাগমারা থানায় অভিযোগ দিতে গেলে পুলিশ তা নিতে গড়িমসি করে। লতিফা বেগম অভিযোগ করে বলেন, তার স্বামী আব্দুল হান্নান ইউপি চেয়ারম্যান ও আ’লীগ নেতা অধ্যক্ষ আবুল হোসেনের নিকট আত্মীয় হওয়ায় পুলিশ এর আগে তার অভিযোগটি আমলে নিতে অনীহা প্রকাশ করেছে।
এদিকে নিরুপায় গৃহবধুর উপর চলতে থাকে ধারাবাহিক নির্যাতন। শুক্রবারও তার উপর অমানুষিক নির্যাতন চালায় তার স্বামী। লতিফা জানান, শুক্রবার সকাল ১০ টার দিকে তাকে শিশু সন্তান সহ ঘরের দরজা বন্ধ করে বেধরক মারপিট করে স্বামী আব্দুল হান্নান। ওই দিন বিকেল পর্যন্ত চলে তার ওপর নির্যাতন। তাকে মুখে বিষ ঢেলে প্রাণনাশেরও হুমকি দেন আব্দুল হান্নান। পরে বিকেলে কিছু সময়ের জন্য হান্নান বাড়ির মেইন গেইটে তালা দিয়ে বাইরে গেলে প্রাচীর টপকিয়ে শিশু সন্তানকে নিয়ে প্রতিবেশির বাড়িতে আশ্রয় নেন লতিফা বেগম। পরে তাদের সহায়তায় ছুটে আসেন বাগমারা প্রেসক্লাবে। এখানে সাংবাদিকদের কাছে তার উপর দিনের পর দিন ধরে চলা নির্যাতনের বর্ননা তুলে ধরার সময় যন্ত্রনায় কাতর ও নিস্তেজ হয়ে পড়লে তাকে বাগমারা মেডিকেলে পাঠানো হয়।
এ বিষয়ে জানতে নির্যাতনকারী স্বামী আব্দুল হান্নানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে সাংবাদিকদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে বলেন, আপনারা যা পারেন আমার বিরুদ্ধে লিখেন তাতে আমার কিছু যায় আসেনা।
এ বিষয়ে নরদাশ ইউপি চেয়ারম্যান ও আ’লীগ নেতা গোলাম সারোয়ার আবুল বলেন, তাদের দাম্পত্যকলহের বিষয়ে একাধিকবার নিস্পত্তি করে দিয়েছি। কিন্তু তারা তা মেনে চলেনি।
যোগাযোগ করা হলে বাগমারা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আমিনুল ইসলাম ওই গৃহবধু এর আগে থানায় এসেছে বলে আমার জানা নেই। তবে এখন থানায় এসে অভিযোগ দিতে চাইলে আমরা তা গ্রহন করব এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।