বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য, সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক ভূমি প্রতিমন্ত্রী, প্রথিতযশা রাজনীতিবিদ ও প্রবীণ বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট কবির হোসেন আর নেই। বুধবার (০৩ মে) বেলা আনুমানিক ২:৪৫ মিনিটে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। কবির হোসেন স্ত্রী নারগিস বেগম, দুই মেয়ে ও এক ছেলেসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। কবির হোসেন রাজশাহী নগরীর উপশহর এলাকার ৩ নম্বর সেক্টরের ১৭৩/৩ নম্বর বাড়িতে বসবাস করতেন।
কবির হোসেনের ছেলে নাসির হোসেন অস্থি জানান, দীর্ঘদিন থেকে তার বাবা বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। বাসায় রেখে চিকিৎসায় দেওয়া হচ্ছিল। সোমবার (১ মে) পিত্তথলিতে জ্বালাপোড়া শুরু করলে তাকে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তাকে আইসিইউতে দেওয়া হয়েছিল। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার দুপুরে তার মৃত্যু হয়।
নাসির হোসেন আরও জানান, তার দুই বোন দেশের বাইরে থাকেন। তারা ইতোমধ্যে দেশে আসার প্রস্তুতি নিয়েছেন। তারা আসার পর শুক্রবার (৫ মে) বাদ জুমা জানাজার নামাজ শেষে তার মরদেহ হেতেমখাঁ কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে সমাহিত করা হবে।
তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা, রাজশাহীর সাবেক মেয়র ও এমপি মিজানুর রহমান মিনু । মিজানুর রহমান মিনু মরহুম কবির হোসেন এর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন ও শোকার্ত পরিবারবর্গ, গুণগ্রাহী ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন।
মিজানুর রহমান মিনু বলেন, বিএনপি’র স্থানীয় থেকে জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতিতে দলকে সুসংগঠিত করতে এডভোকেট কবির হোসেনের ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়, তার শূন্যস্থান কখনোই পূরণ হওয়ার নয়; বিএনপি একজন জনপ্রিয় প্রবীণ অভিভাবক হারালো।
অন্যদিকে অ্যাডভোকেট কবির হোসেনের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন রাজশাহী মহানগর ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুর্তূজা ফামিন, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আকবর আলী জ্যাকি, সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার মাকসুদুর রহমান সৌরভ সহ রাজশাহী মহানগর ছাত্রদলের এবং মহানগরের আওতাধীন প্রতিটি ছাত্রদল ইউনিটের সর্বস্তরের নেতাকর্মীবৃন্দ। রাজশাহী মহানগর ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দ বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছেন।
কবির হোসেনের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও চারঘাট-বাঘার সংসদ সদস্য শাহ্রিয়ার আলম, এমপি। তিনি শোকসন্তপ্ত পরিবার পরিজনের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপান করেছেন। শোক বার্তায় মাননীয় প্রতিমন্ত্রী বলেন, জনাব কবির হোসেন ব্যক্তিগতভাবে একজন সজ্জন ও পরোপকারী ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন। তিনি প্রথমে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী এবং পরে ভূমি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি একজন আইন বিশেষজ্ঞ ছিলেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে পরিজিত হওয়ার পর তিনি রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন এবং ব্যক্তিগত ও সামাজিক কর্মকান্ডে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। মাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মহান রাব্বুল আলামিনের নিকট দোয়া প্রার্থনা করেন।
উল্লেখ্য, কবির হোসেন বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনবার এমপি নির্বাচিত হন। এর মধ্যে ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে রাজশাহী-২ এবং ২০০১ সালে রাজশাহী-৫ আসন থেকে নির্বাচিত এমপি ছিলেন। প্রথমে ১৯৯১ সালে রাজশাহী সদর আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী এবং পরে তাকে ভূমি প্রতিমন্ত্রী করা হয়। তিনি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসন থেকে মনোনয়ন পেয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মেরাজ উদ্দিন মোল্লাহর কাছে পরাজিত হন প্রবীণ রাজনীতিবিদ কবির হোসেন।