মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারী ২৭ পরীক্ষার্থী ৩, তবু কেউ পাস করেনি

বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার কর্নিবাড়ি বিএল সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারী ৩০ জন। প্রতিমাসে এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের পেছনে সরকারি অর্থ খরচ হয় ছয় লাখ পাঁচ হাজার টাকা। ২০২২ সালের দাখিল পরীক্ষায় মোট তিন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে কেউ পাস করেনি।

আর নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার মশিন্দা শিকারপুর রশিদীয়া দাখিল মাদ্রাসার মোট শিক্ষক-কর্মচারী ১৯ জন। মাদ্রাসাটির শিক্ষক-কর্মচারীরা প্রতিমাসে সরকারি অংশের বেতনভাতা নেন তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা। এই মাদ্রাসার মোট তিন পরীক্ষার্থীর একজনও পাস করেনি।

শুধু এই দুটি মাদ্রাসা নয়, দেশের এমন ৯টি মাদ্রাসার কোনও পরীক্ষার্থী দাখিল পরীক্ষায় পাস করেনি। অথচ এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীর চেয়ে পরীক্ষার্থী ছিল খুবই কম। তবুও এমন ফলাফলের কারণ জানতে চাইলে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের উপপরিচালক জাকির হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো এবং এমপিও নীতিমালায় কাম্য শিক্ষার্থী, কাম্য ফলাফল না থাকলে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও সাময়িকভাবে স্থগিত রাখার বিধান রয়েছে।

শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে সে কারণে শোকজ করা হয়েছে। জবাব সন্তোষজনক হলে কাঙ্খিত ফলাফল করার সুযোগ থাকলে আপাতত ছাড় পেতে পারে। তাছাড়া এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও সাময়িকভাবে বা স্থায়ীভাবে বন্ধ করা হবে। আমরা এমন প্রতিষ্ঠান চাই না যেসব প্রতিষ্ঠানের ছাত্রের চেয়ে শিক্ষক-কর্মচারী তিনগুণ। অথচ একজনও পাস করে না।’

২০১৮ সালের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (মাদ্রাসা) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালায় এমপিও পাওয়ার শর্তে দাখিল মাদ্রাসায় (প্রথম থেকে দশম শেণি পর্যন্ত) কাম্য শিক্ষার্থী থাকতে হবে শহরের জন্য ৩০০ এবং মফস্বলের জন্য ২৫০ জন। আর শুধু বালিকা দাখিল মাদ্রাসা হলে ২৫০ জন। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে ৬০ শতাংশ।

নীতিমালা অনুসারে এবতেদায়িসহ দাখিল মাদ্রাসায় সর্বোচ্চ ২৭ জন শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে কারিসহ ১৮ জনই শিক্ষক। আর সর্বোচ্চ আট জন কর্মচারী। ২০১২ সালের দাখিল স্তরে শূন্য পাস করা মাদ্রাসাগুলোর পরীক্ষার্থীর চেয়ে ৫ থেকে ৬ গুণ বেশি শিক্ষক। অথচ কেউ পান করেনি।

মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের উপপরিচালক জাকির হোসেন বলেন, পর পর তিন বছর কাঙ্খিত, শিক্ষার্থী, কাঙ্খিত ফলাফল থাকলে এমপিও পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হয়। একইভাবে পর পর তিন বছর কাঙ্খিত শিক্ষার্থী, কাঙ্খিত ফলাফল না থাকলে শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও স্থাযীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে।

২০২২ সালের দাখিল পরীক্ষায় শূন্য পাস করা ১১টি মাদ্রাসা প্রধানদের সোমবার (৬ ফেব্রæয়ারি) কারণ দর্শানো নোটিশ করা হয়েছে। নোটিশে আগামী ১৫ ফেব্রæয়ারির মধ্যে সন্তোষজনক জবাব দিতে বলা হয়েছে। জবাব সন্তোষজনক না হলে সাময়িক বা স্থায়ীভাবে শিক্ষক-কর্মচারীদের সরকারি অংশের বেতন-ভাতা স্থগিত বা বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে।

১১ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারী, শিক্ষার্থী ও বেতন-ভাতার চিত্র
দাখিল পরীক্ষায় কোনও শিক্ষার্থী পাস না করা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে পটুয়াখালী জেলার দশমিনা উপজেলার দক্ষিণ দাশপাড়া আব্দুল গণি বালিকা দাখিল মাদ্রাসা। এখানকার ২২ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কেউ পাস করেনি। এই মাদ্রাসার মোট ১৭ জন শিক্ষক-কর্মচারীকে প্রতিমাসে সরকার বেতন-ভাতা দেয় তিন লাখ তিন হাজার।

পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার আলজি বালিকা দাখিল মাদ্রাসার মোট ১০ জন শিক্ষার্থী দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়ে একজনও পাস করেনি। এই মাদ্রাসার ৩০ জন শিক্ষক-কর্মচারী প্রতিমাসে সরকারি বেতন-ভাতা নেন ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা।

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মহিলা ফাজিল মাদ্রাসার মোট ১৯ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে একজনও পাস করেনি। এই মাদ্রাসার মোট ৩০ জন শিক্ষক-কর্মচারী প্রতিমাসে সরকারি বেতন-ভাতা নেন ৬ লাখ ৬২ হাজার।

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলাধীন তাফালবাড়িয়া হোসেনিয়া সিনিয়র আলিম মাদ্রাসার মোট ৬ জন শিক্ষার্থী দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়ে একজনও পাস করেনি। এই মাদ্রাসার মোট ২১ জন শিক্ষক-কর্মচারী প্রতিমাসে সরকারি বেতন-ভাতা নেন ৪ লাখ ২৩ হাজার টাকা।

ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলাধীন তারাবুনিয়া আমেনা খাতুন দাখিল মাদ্রাসার মোট ১১ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কেউ পাস করেনি। এই মাদ্রাসার মোট ১৬ জন শিক্ষক-কর্মচারী প্রতিমাসে সরকারি বেতন-ভাতা নেন ২ লাখ ৬৮ হাজার টাকা।

বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলাধীন কর্নিবাড়ি বিএল সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার মোট ৩ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষার্থীর কেউ পাস করেনি। এই মাদ্রাসার মোট ২৭ জন শিক্ষক-কর্মচারী প্রতিমাসে সরকারি বেতন-ভাতা নেন ৬ লাখ ৫ হজার।

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার বড়পাংশী খন্দকার নুরুন্নাহার জয়নাল আবেদীন দাখিল মাদ্রাসার ১১ জন শিক্ষার্থীর কেউ পাস করেনি। এই মাদ্রাসার মোট ১৫ জন শিক্ষক-কর্মচারী প্রতিমাসে সরকারি বেতন-ভাতা নেন ২ লাখ ৫৩ হাজার টাকা।

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার ইসলামপুর মুজিপাড়া দারুল দাখিল মাদ্রাসার মোট ১০ জন পরীক্ষার্থীর কেউ পাস করেনি। মাদ্রাসাটির মোট ১৪ জন শিক্ষক-কর্মচারী প্রতিমাসে সরকারি বেতন-ভাতা নেন ২ লাখ ৮ হাজার টাকা।

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার কালিকাপুর দাখিল মাদ্রাসার মোট ১২ জন শিক্ষার্থীর কেউ পরীক্ষায় পাস করেনি। মাদ্রাসাটির ১৮ জন শিক্ষক-কর্মচারী প্রতিমাসে সরকারি বেতন-ভাতা নেন ২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা।

পাবনার সাথিয়া উপজেলাধীন ধোপাদহ আউলিয়া হজেরিন দাখিল মাদ্রাসার মোট ৮ জন পরীক্ষা দিয়ে কেউ পাস করেনি। মাদ্রাসাটির ১৫ জন শিক্ষক-কর্মচারী প্রতিমাসে সরকারি বেতন-ভাতা নেন ২ লাখ ৯৩ হাজার টাকা।

নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলাধীন মশিন্দা শিকারপুর রশিদীয়া দাখিল মাদ্রাসার মোট ৩ জন পরীক্ষার্থীর কেউ পাস করেনি। মাদ্রাসটির মোট ১৯ জন শিক্ষক-কর্মচারী প্রতিমাসে সরকারি বেতন-ভাতা নেন ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
তথ্যসূত্র: বাংলাট্রিবিউন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *