২৪ দিনে রাজশাহীতে আগুনে পুড়লো ছয়টি গাড়ি

নিউজ ডেস্কঃ


রাজশাহী জেলায় গত ২৪ দিনে আগুনে পুড়েছে ছয়টি গাড়ি। এরমধ্যে জেলায় আগুন দেয়া হয়েছে প্রাইভেট কার, ট্রাক ও বাসে। আর রাজশাহী বিভাগে ২৪টি যানে আগুন দেয়া হয়েছে। এছাড়াও সারাদেশে ১৯৭ যানবাহনে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে।

জানা গেছে, সর্বশেষ মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) ভোর ৪টার দিকে রাজশাহী নগরীতে পার্কিং করা একটি ট্রাকে আগুন নিয়ে দুর্বৃত্তরা। আগুনে পুড়ে গেছে ট্রাকের সামনের অংশ। এই ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। রাজশাহী নগরীর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়াম মার্কেটের সামনে ঘটনাটি ঘটে।

এর আগে পুঠিয়া উপজেলার ধোপাপাড়া গ্রামে রোববার (১৯ নভেম্বর) রাত ১০টার দিকে একটি স্টাফ বাসে পেট্রোলবোমা মারে দুর্বৃত্তরা। ঘটনার সময় বাসে চালক ও তার সহযোগী ছাড়া কোনো যাত্রী ছিলেন না। এতে বাসটি ঝলসে যায়। একই দিনে রোববার (১৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় গোদাগাড়ী উপজেলার উদপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহী মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোলবোমা ছুড়ে মারে দুর্বৃত্তরা। বাসটি আগুনে ঝলসে যায়। তবে সেখানেও কেউ হতাহত হয়নি। এক সপ্তাহে আগে মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) দিবাগত রাতে মোহনপুর উপজেলায় পাটবোঝাই একটি ট্রাকে আগুন দেয়া হয়েছে। এতে কিছু পাট পুড়ে গেলেও ট্রাকের কোনো ক্ষতি হয়নি। স্থানীয়রাই আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছেন।

এর আগে মোহনপুরে পণ্যবাহী একটি ট্রাকে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। সোমবার (৬ নভেম্বর) দুপুর ৩টার দিকে উপজেলার মৌগাছি নন্দনহাট মোড়ে পেট্রোলবোমা মারা হয় ট্রাকটিতে। আর এতেই ট্রাকটি ঝলসে যায়। বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতালের প্রথমদিনে বাঘায় একটি প্রাইভেট কারে আগুন দিয়েছিল পিকেটাররা। আগুনে কারটি সম্পূর্ণ ভস্মীভুত হয়ে গেছে। গত ২৯ অক্টোবর বেলা ১২টার দিকে বাঘা উপজেলার মনিগ্রাম ইউনিয়নের আটঘরিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া পুঠিয়া উপজেলায় দিনের বেলায় ট্রাক ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে। চারঘাটে রেললাইনে দুই দফা নাশকতার চেষ্টা হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, রাজশাহীতে ছয়টি গাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে। রাজশাহী বিভাগে দেয়া হয়েছে ২৪টি গাড়িতে আগুন। এতে হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও আর্থিকভাবে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। কিছু গাড়ি মেরামত করে আবার রাস্তায় নামাবো যাবে।

নগরীতে পুড়ে যাওয়া ট্রাকটির মালিক শফিকুজ্জামান শোভন জানান, সোমবার (২০ নভেম্বর) অন্য একটি স্থান থেকে পণ্য নিয়ে এসে ট্রাক ফাঁকা করে সেখানে রেখে দেয়া হয়। মঙ্গলবার ভোরে জানতে পারি, ট্রাকটিতে আগুন দেয়া হয়েছে। ছুটে এসে দেখি, ট্রাকের কেবিনে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স রাজশাহী সদরদফতরের কর্মীরা ট্রাকটির আগুন নেভান। সামনের অংশ পুড়ে গেছে। এতে ইঞ্জিনের বেশ ক্ষতি হয়েছে।

চন্দ্রিমা থানার ওসি মাহবুব আলম জানান, কে বা কারা আগুন দিয়েছে, তা ওই ট্রাকের কেউ ও আশপাশে থাকা নিরাপত্তাকর্মীরা দেখেননি। আমরা বিষয়টিতে খতিয়ে দেখা হবে।
এদিকে, রোববার (১৯ নভেম্বর) গোদাগাড়ী উপজেলায় পেট্রোলবোমায় পোড়া ‘শিমু নূর তাজ’ নামের যাত্রীবাহী বাস মালিকের ভাই সোহেল রানা জানান, বাসটি কেনার বয়স ছয় মাস। এরপর ধারদেনা করে বাসের নতুন বডি করি। নতুন বডি করার বয়স তিন মাস হবে। বাস নতুনই আছে। এর মধ্যে এমন একটা ঘটনা ঘটে গেলো। এই বাসটা ঠিক করে সড়কে নামাতে তার ১০ লাখ টাকার বেশি খরচ হবে।

রাজশাহী পরিবহন গ্রুপ মালিক সমিতির সহ-সভাপতি নুরুজ্জামান মোহন বলেন, গোদাগাড়ীতে একটি বাস আগুনে পুড়ে গেছে। আরেকটি বাস পুড়েছে অন্য একটি কোম্পানীর। গোদাগাড়ীর পোড়া বাসের জন্য আমরা কাগজপত্র চেয়েছি। ক্ষতিগ্রস্ত বাসের কাগজপত্র ফেডারেশনে পাঠাবো। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত হবে।

গোদাগাড়ী থানার ওসি আবদুল মতিন বলেন, বাসে আগুন দেয়ার ঘটনায় বাসের চালক তহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করেছেন। এই মামলায় চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
অন্যদিকে বাংলাট্রিবিউন সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধী দলগুলোর ডাকা মহাসমাবেশের দিন (২৮ অক্টোবর) থেকে সোমবার (২০ নভেম্বর) পর্যন্ত ২৪ দিনে অন্তত ১৯৭টি যানবাহন ও স্থাপনায় অগ্নিসংযোগের খবর পেয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। এই সময়ে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর হরতাল, অবরোধ ও সমাবেশকে কেন্দ্র করে সারা দেশে এসব যানবাহন ও স্থাপনায় আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। সেই হিসাবে দেশে প্রতিদিন প্রায় সাতটি যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে, এর মধ্যে গড়ে প্রতিদিন প্রায় পাঁচটি করে বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের মিডিয়া কর্মকর্তা তালহা বিন জসীম এ এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

২৮ অক্টোবর থেকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত দেয়া আগুনে মোট ১৮৫টি যানবাহন ও ১৫টি স্থাপনা পুড়েছে। যানবাহনের মধ্যে বাস ১১৮টি, ট্রাক ২৬টি, কাভার্ড ভ্যান ১৩টি, মোটরসাইকেল ৮টি, প্রাইভেটকার ২টি, মাইক্রোবাস ৩টি, পিকআপ ৩টি, সিএনজি ৩টি, ট্রেন ২টি, নছিমন ১টি, লেগুনা ৩টি, ফায়ার সার্ভিসের পানিবাহী গাড়ি ১টি, পুলিশের গাড়ি ১টি, অ্যাম্বুলেন্স ১টি, বিএনপির দলীয় কার্যালয় ৫টি, আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় ১টি, পুলিশ বক্স ১টি, কাউন্সিলর অফিস ১টি, বিদ্যুৎ অফিস ২টি, বাস কাউন্টার ১টি, শোরুম ২টিসহ আরও ২টি স্থাপনা পুড়েছে।

আর উপজেলার হিসাবে দেশের ৬০টি উপজেলায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। বাকি ৪৩৫টি উপজেলায় কোনও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেনি। জেলা হিসেবে গাজীপুরে, উপজেলা হিসেবে বগুড়া সদরে আগুনের ঘটনা সবচেয়ে বেশি।

ফায়ার সার্ভিসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা যায়, ঢাকা সিটিতে ৯৫টি, ঢাকা বিভাগে ৩৭টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ২২টি, রাজশাহী বিভাগে ২৪টি, বরিশাল বিভাগে ৭টি, রংপুর বিভাগে ৭টি, খুলনা বিভাগে ২টি, ময়মনসিংহ বিভাগে ২টি এবং সিলেট বিভাগে ১টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।

জেলা ভিত্তিক পরিসংখ্যানের মতে , গাজীপুর জেলায় সবচেয়ে বেশি অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। গাজীপুরে ১৬টি, চট্টগ্রামে ১৪টি, বগুড়া ১৩টি, নারায়ণগঞ্জ ৬টি, মানিকগঞ্জ ৪টি, ফরিদপুর ৪টি, লালমনিরহাট ৪টি ও নাটোর ৪টি করে আগুনের সংবাদ পায় ফায়ার সার্ভিস।

এছাড়া উপজেলাভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বগুড়া সদর উপজেলায় অগ্নিসংযোগের ঘটনা সবচেয়ে বেশি। বগুড়া সদরে আটটি, গাজীপুর সদরে ছয়টি, নারায়ণগঞ্জ সদরে চারটি, ফেনী সদরে তিনটি এবং কালিয়াকৈর উপজেলায় চারটি করে আগুনের ঘটনা ঘটে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *